বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বাবা, সোমালিয়ান জলদস্যুরা আমাদের বন্দি করে রেখেছে’

  •    
  • ১৩ মার্চ, ২০২৪ ১৮:০০

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আব্দুল্লাহ’র জিম্মি নাবিক ও ক্রুদের একজন এ এস এম সাইদুজ্জামান। জাহাজটির এই চিফ ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি নওগাঁয়। স্বজনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মা-বাবা, স্ত্রীসহ অন্যান্য স্বজন।

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া পণ্যবাহী বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আব্দুল্লাহ’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান। দস্যুরা জাহাজটি নিজেদের কব্জায় নেয়ার পর তাকেসহ ২৩ নাবিক ও ক্রুকে জিম্মি করে রেখেছে।

নওগাঁর ছেলে সাইদুজ্জামান জলদস্যুদের হাতে আটকের পর সাইদুজ্জামান তার বাবা ও স্ত্রীর সঙ্গে একবার ফোনে কথা বলেছেন।

খোঁজ নিয়ে জেলা শহরের পলিটেকনিক এভিনিউয়ে দুবলহাটি রোডের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। মাঝে মাঝে ভেসে আসছে পরিবারের সদস্যদের কান্নার আওয়াজ।

কয়েকদিন আগেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভিডিও কলে সাইদুজ্জামানের কথোপকথন আর হাসি-ঠাট্টায় আনন্দে ঝলমল করেছে পুরো বাড়ি। আর সেই মানুষটি বর্তমানে ভিনদেশের জলদস্যুদের হাতে বন্দি। এদিকে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সময় কাটছে চরম দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠায়।

জাহাজে দায়িত্বরত অবস্থায় চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাইদুজ্জামান। ফাইল ছবি

সাইদুজ্জামানের বাবা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “তিন ছেলে সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সাইদুজ্জামান। আমার ছেলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাহাজে কাজ করেছে। সবশেষ কিছুদিন আগে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটিতে চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেয়।

“জলদস্যুরা আমার ছেলেসহ সবাইকে আটকের পর জাহাজের একটি ঘরে বন্দি করে রাখে। ঘটনার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন করে ছেলে। তখন সে বলে- ‘বাবা, আমাদের আটক করে বন্দি করে রেখেছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা।’ এ কথা শোনার পর আমরা সবাই চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি।”

তিনি বলেন, ‘দস্যুরা জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাচ্ছে বলে আমাকে বলেছিল ছেলে। কী হবে এখন, কিছুই বুঝতে পারছি না আমরা। সরকারের কাছে হাতজোড় করে আকুল মিনতি জানাচ্ছি- আমার ছেলেসহ জিম্মি করে রাখা সবাইকে স্বজনের কাছে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।’

সাইদুজ্জামানের মা কোহিনূর বেগম বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরা সাইদুজ্জামানকে জলদস্যুরা বন্দি করে রেখেছে। সরকার যেন আমার ছেলেসহ অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়।

‘আমার ছেলে কেমন আছে, কী করছে, কী খাচ্ছে কিছুই জানি না। আমরা খুবই চিন্তায় আছি।’

কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সন্তানের জন্য ব্যাকুল এই মা।

সাইদুজ্জামানেরর স্ত্রী মাননা তাহরীন বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) ১০টার দিকে সবশেষ কথা হয় আমার স্বামীর সাথে। তখন সে বলে- ‘আমরা ইফতার করলাম। ইফতারের সময় এবং ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য কিছু সময় দিয়েছিল জলদস্যুরা।’

“আমার স্বামী বলেছিল, তখন পর্যন্ত তাদের কোনো ধরনের ক্ষতি করেনি ওরা। তবে তারা বড় অংকের মুক্তিপণ দাবি করেছে। সেটা না দিলে তারা জিম্মি সবাইকে মেরে সাগরে ফেলে দেবে সবাইকে।”

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাহরীন বলেন, ‘আমার এক বছর বয়সী মেয়েটি জানেই না যে ওর বাবাকে জলদস্যুরা আটকে রেখেছে। যেভাবেই হোক আমার স্বামীকে সহিসালামতে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি মালিকানাধীন সমুদ্রগামী এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ভারত মহাসাগরে হামলা চালিয়ে জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় জলদস্যুরা।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে জাহাজটি আক্রান্ত হয়। জলদস্যুদের অনেকের হাতে অস্ত্র রয়েছে। সোমালিয়া থেকে প্রায় ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে সমুদ্রে প্রায় ১০০ দস্যু জাহাজটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আর জিম্মি করে রেখেছে জাহাজটির নাবিক ও ক্রু মিলে ২৩ জনকে, যাদের সবাই বাংলাদেশি।

এ বিভাগের আরো খবর