ঘটনাটি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সাগরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের। চতুর্থ শ্রেণির ৫টি পদে কর্মচারী নিয়োগে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন এবং প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের বিরুদ্ধে।
তারা নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রায় ৭০ লাখ টাকা ও স্কুলের নামে ১০ শতক জমি লিখে নিয়েছে বলে জানান ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য।
বিদ্যালয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাগরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শূন্য পদে একজন করে নিরাপত্তাকর্মী, আয়া, নৈশপ্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের জন্য গত বছর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।সেই মোতাবেক ৫টি পদের নিয়োগ গত ৩১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। কিন্তু ওই নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার আগেই বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক যোগসাজশ করে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করছিলেন।
এ ঘটনায় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সঞ্জয় সরকার, খয়বুল ও মাহবুব মোরশেদ গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।
ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, আগে থেকে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ৪র্থ শ্রেণির ৫টি পদে ৭ জন চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া আয়া পদের জন্য এক চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে স্কুলের নামে ১০ শতক জমি লিখে নিয়েছেন, পাশাপাশি নগদ টাকাও নিয়েছেন।
তিনি জানান, নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য একজনের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক ১২ লাখ টাকা নিয়েছে এবং একই পদে নিয়োগের জন্য সভাপতি একজনের কাছ থেকে ১২ লাখ ও আরেকজনের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। আয়া পদের জন্য আরেকজনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা, নৈশপ্রহরী পদে সাড়ে ৯ লাখ টাকা, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদের জন্য সাড়ে ৯ লাখ টাকা এবং এক চাকরি প্রত্যাশীর বাবা ওই স্কুলে চাকরি করার সুবাদে তার কাছ থেকে অফিস সহায়ক পদের জন্য ৭ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে।
অভিযোগকারীদের দাবি, সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়াসহ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করবেন।
এদিকে স্থানীয়দের ভাষ্য, সাগরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো জমি বা খেলার মাঠ নেই, স্থানীয়রা চেয়েছিলেন কেউ যদি স্কুলের নামে জমি লিখে দেয়, তাহলে তাকে যেন চাকরি দেয়া হয়। একজন ১৫ শতক জমি দিতেও চেয়েছিল, কিন্তু ফিরোজ চেয়ারম্যান সেটা শোনেননি। যদিও এক চাকরি প্রত্যাশী ১০ শতক জমি লিখে দিয়েছে স্কুলের নামে।
এ ছাড়া যারা টাকা দিয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিয়োগ না পেয়েও স্কুলে কাজ করছে বলে জানান তারা।
টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘কে কী নিলো, ওই সম্পর্কে বলার নেই।’
১২ লাখ টাকা নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরকম কোনো বিষয় নেই।’
কোনো চাকরি প্রত্যাশী স্কুলের নামে জমি লিখে দিয়েছে কিনা- প্রশ্নের জবাবে এনামুল বলেন, ‘এগুলো আপনার জানা লাগবে না, জানতে হলে অফিসে আসেন।’
তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আপনাকে কী বলা লাগবে, কী শুনলে খুশি হবেন? আপনার কাছে কি কেউ অভিযোগ করেছে?’
তিনি টাকা নিয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নে উত্তেজিত হয়ে ফিরোজ বলেন, ‘এত গল্প নেই, আপনার কাছে কেউ অভিযোগ দিয়ে থাকলে তাকে নিয়ে আসেন, তা ছাড়া মোবাইল নিয়ে নওগাঁ বসে থাকেন।’
টাকা নিয়েছেন কিনা আবারও জিজ্ঞেস করলে, তিনি উত্তেজিত স্বরে জানতে চান, কে অভিযোগ করেছে? যদি কেউ অভিযোগ করে, তাহলে তাকে নিয়ে আসেন বলে সংযোগ কেটে দেন তিনি।
টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।