বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাংনী সরকারি কলেজের পিয়নের বিরুদ্ধে স্কুলে শিক্ষকতার অভিযোগ

গাংনীর ইউএনও প্রীতম সাহা বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

দেড় যুগ ধরে মেহেরপুরের একটি কলেজের পিয়ন পদে দায়িত্ব পালন করা এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে উপজেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত আনোয়ার আলী গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের পিয়ন। তিনি একই উপজেলার মানিকদিয়া কেশবনগর ভোলাডাঙ্গা মাধ‍্যমিক (এম বি কে) বিদ‍্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের চাকরি করছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী ও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, খাতা-কলমে প্রধান শিক্ষক হলেও আনোয়ার বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া স্কুলে আসেন না। গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে তিনি বেতন তুললেও যে মাধ্যমিক বিদ‍্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, সেখান থেকে কোনো বেতন তোলেন না, তবে আনোয়ার আলীর বিরুদ্ধে এম বি কে বিদ‍্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আছে।

এদিকে একই সঙ্গে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার অভিযোগে গত ৪ মার্চ স্কুলের ম‍্যানেজিং কমিটি মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে।

স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে না গিয়ে আনোয়ার বাড়িতে বসেই করেন দাপ্তরিক কার্যক্রম। সেই সঙ্গে তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের পিয়ন হিসেবে কর্মরত। তিনি ২০০৫ সালে উপজেলার এম বি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন।

এম বি কে মাধ্যমিক বিদ‍্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোনোদিন কোনো ক্লাস নিতে আসেনি। আবার আমরা অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা স‍্যারকে ঠিকমতো চিনিও না, তবে বিশেষ দিনগুলোতে তিনি স্কুলে আসেন ঠিকই; ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তেমন একটা সময় দেন না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এম বি কে মাধ্যমিক বিদ‍্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের বিদ‍্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রায় বছরজুড়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকেন। বিশেষ দিনগুলোতে তার পদধূলি পড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল কাজ তিনি বাড়িতে বসেই করেন, তবে তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খরচপত্র ও নিয়োগের বিষয়ে খোঁজ রাখেন।’

এ বিষয়ে এম বি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের প্রয়াত সভাপতি মোজাম্মেল হকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অবৈধভাবে তিনি (আনোয়ার আলী) ২০০৫ সালে নিয়োগ নেন, যা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা জানেও না।

‘স্থানীয়ভাবে আনোয়ার আলী প্রভাবশালী হওয়াই তখন তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি। বিদ‍্যালয়টি ২০২৩ সালে এমপিও হলে আমার স্বাক্ষর জাল করে বাড়িতে বসেই ২৪ লাখ টাকার বিনিময়ে তিনজন শিক্ষককে নিয়োগ দেন এই আনোয়ার।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজে চাকরি করেন আনোয়ার। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে না আসায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমি বিভিন্ন মহলে তার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

‘এমনকি বাধ‍্য হয়ে তার বিরুদ্ধে চলতি মাসে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছি। এখন অপেক্ষায় আছি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কী করেন, তা দেখার জন্য।’

এ বিষয়ে অভিযোগ ওঠা আনোয়ার আলী বলেন, ‘আমি গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজে চাকরি করি, তবে এ বিদ‍্যালয়টির সঙ্গে আমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্ত আছি। আমি অফিশিয়াল কাজগুলো অনেক সময় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে, আবার কখনও বাড়িতে বসে করি, তবে এটা ঠিক, এই প্রতিষ্ঠান থেকে আমি কোনো দিন বেতন ওঠাইনি। আমি প্রতিষ্ঠানটিকে খুব ভালোবাসি।’

গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কলেজে ১৮ বছর ধরে পিয়নের বেতন উত্তোলন করছে আনোয়ার হোসেন। আমিও হঠাৎ করেই শুনছি তিনি একটি বিদ্যালয়ের নাকি প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’

গাংনীর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) হোসেন মোবারক বলেন, ‘আমি শোনার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। শিগগিরই এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হবে।’

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর