ঝালকাঠিতে এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিন সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষ ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত পরীক্ষা শেষে রোববার দুপুর একটার পর এ ঘটনা ঘটে।
২০৩ ও ২০৫ নম্বর কক্ষে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পৌর আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উদ্বোধন বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়।
কক্ষ ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
পরীক্ষার দিন কেন্দ্র সচিব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মাওলানা এএসএম মাসুম বিল্লাহ।
মুঠোফোনে ধারণ করা ভাঙচুরের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার দুটি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে নিউজবাংলা।
বিদ্যালয় পরিদর্শন করে জানা যায়, প্রশাসনিক ভবনের দোতলার ২০৩ নম্বর কক্ষে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩২৪৫৯ থেকে ২৩২৪৭৩ পর্যন্ত রোল নম্বরধারী ১৫ জন এবং উদ্বোধন বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৩২৬০৫ থেকে ২৩২৬২৯ পর্যন্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
ওই কক্ষের চারটি বৈদ্যুতিক পাখা, তিনটি টিউব লাইট এবং কক্ষ সংলগ্ন ছয়টি ওয়াশরুম, টয়লেটের দরজা, ফ্ল্যাশ ও কমোড ভাঙচুর করা হয়েছে।
২০৫ নম্বর কক্ষে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩২৪২৮ থেকে ২৩২৪৪৩ পর্যন্ত রোল নম্বরধারী ১৬ জন এবং পৌর আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৪২৫১৪ থেকে ২৪২৫২৮ পর্যন্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ওই কক্ষের দুটি বৈদ্যুতিক পাখা এবং দুটি টিউব লাইট ভাঙচুর করা হয়।
হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদালয়ের কর্মচারী (আয়া) মাকসুদা বেগম বলেন, ‘পরীক্ষা শেষ হলে পরীক্ষার্থীরা হৈহুল্লোড় করে নেমে যায়। পরে রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখি সব ভাঙাচোরা। তখন স্যারেরাও দায়িত্ব পালন শেষ করে চলে গেছে, দেখি।’
এদিকে বিকেলে স্কুলে এসে এ দৃশ্য দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।
তাদের একজন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের কাজ শেষ হলে উত্তরপত্র জমা নিয়ে পরীক্ষার্থীরা বের হবার পরে কক্ষ পরিদর্শকের বের হবার কথা। তাহলে কক্ষ পরিদর্শক কী পরীক্ষার্থী কক্ষে রেখে উত্তরপত্র নিয়ে বের হয়ে গেছেন? কর্মরতরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে সরকারি সম্পদের এত বড় ক্ষতি হতো না।’
গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী বলেন, ‘প্রতি বছরই এমন ঘটছে। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছেলেরা আমাদের ঈর্ষা করে। মেয়েদের স্কুলে ঢুকতে পারে না তারা।
‘কেবল এসএসসি পরীক্ষার সময় স্কুলে ঢোকার সুযোগ পায়। আর প্রতি বছরই প্রতিহিংসা মেটাতে আমাদের বাথরুম এবং বেঞ্চে আজেবাজে কথা লিখে যায়। এবার এমন তাণ্ডব চালিয়েছে।’
হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্র সচিব মাওলানা এএসএম মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই বলব না। যা বলার প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব বলবেন।’
কেন্দ্র সচিব এবং ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছুটিতে আসছি। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন মাসুম বিল্লাহ স্যার, তবে ভাঙচুরের ঘটনা শুনেছি।’
ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান আহম্মেদ বলেন, ‘হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রেটিতে সাড়ে ৫০০ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। সবাই আমার স্কুলের ছাত্র নয়। কিছু মেয়ে পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে।
‘আর এ বিষয়টি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় বা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায়নি। তারপরও ঘটনার তদন্তে যদি আমার স্কুলের ছাত্ররা দোষী প্রমাণিত হয়, তবে আমি অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’
ঝালকাঠি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’