ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে শনিবার।
এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বিঘ্নে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
ইসির তথ্যানুযায়ী, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে সাধারণ এবং কুমিল্লা সিটিতে মেয়রের শূন্য পদে উপনির্বাচন ছাড়াও তিনটি পৌরসভার সাধারণ ও বিভিন্ন পৌরসভার মেয়রের শূন্য পদসহ নানা ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের শূন্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে শনিবার।
এ ছাড়া ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন, ৭টি জেলা পরিষদের উপনির্বাচনসহ ১৮৭টি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন শূন্য পদে রাত পোহালেই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, এসব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে ইমেজ সংকটে পড়তে না হয়, সেজন্য সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছেন সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের ব্যাপারে তারা বদ্ধপরিকর।
নির্বাচন উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একটি আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
প্রস্তুত ময়মনসিংহ
নির্বাচনের আগের দিন শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে ৭টি বুথ থেকে ইভিএম বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী নিউজবাংলাকে জানান, নির্বাচনে ১২৮টি কেন্দ্রের ৯৯০টি কক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হবে ভোট। স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি ৭ প্লাটুন বিজিবি, ১১ প্লাটুন পুলিশ, আর্মড পুলিশ এবং আনসার সদস্য, ১৭টিম র্যাব ছাড়াও ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি জানান, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে চারজন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে থাকবেন ৫ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, ‘কেন্দ্রগুলোকে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কেউ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক কঠোরভাবে দমন করা হবে।’
ময়মনসিংহ সিটির দ্বিতীয় এই নির্বাচনে মেয়র পদে ইকরামুল হক টিটু (টেবিল ঘড়ি), এহতেশামুল আলম (ঘোড়া) ও অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু (হাতি) ছাড়াও এই পদে লড়ছেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. রেজাউল হক (হরিণ) এবং জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল (লাঙ্গল)।
এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন। একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় ৩২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে।
ভোটের অপেক্ষায় কুমিল্লা নগরবাসী
কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনের প্রচার শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায়। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে কুমিল্লা জিলা স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে ইভিএমসহ নির্বাচনি সরঞ্জামাদি পাঠানো হয় ভোটকেন্দ্রগুলোতে।
কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইভিএম মেশিন এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি পরিপূর্ণ নিরাপত্তায় পাঠানো হয়েছে। আশা করি, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ করতে পারব।’
এবার কুসিক নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ২৪ হাজার ২৭৪ জন এবং পুরুষ ভোটার এক লাখ ১৮ হাজার ১৮২ জন। এছাড়া ট্রান্সজেন্ডার ভোটার রয়েছেন দুইজন। এবার পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার ছয় হাজার ৯২ জন বেশি।
২৭ ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের মোট ৬৪০টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে।
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য দ্বারা পুরো সিটি করপোরেশন এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। যারা নাশকতা করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত বছর ১৩ ডিসেম্বর কুমিল্লা সিটি মেয়র আরফানুল হক রিফাত সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তারপর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
উপনির্বাচনে কুমিল্লা সিটির ২৭টি ওয়ার্ডে পুলিশ, এপিবিএন ও আনসারের ২৭টি, ৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও দুটি রিজার্ভ টিম থাকবে। সেই সঙ্গে নিয়োজিত থাকবে র্যাবের ২৭টি টিম এবং ১২ প্লাটুন বিজিবি সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোট ২ হাজার ৭৭২ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ২২ জনের ফোর্স অন্য স্থানীয় নির্বাচনের কেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে।
অন্যদিকে, ময়মনসিংহ সিটির ১২৮টি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও ভোটের এলাকায় নিয়োজিত থাকবে পুলিশ, এপিবিএন, আনসারের ৩৩টি ভ্রাম্যমাণ টিম, ১১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও একটি রিজার্ভ টিম। ৩৩টি ওয়ার্ডে র্যাবের ১৭টি টিম এবং সাত প্লাটুন বিজিবি থাকবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।