খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করা তরুণী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর বিচারক রনক জাহানের আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহা।
তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিকেলে আমরা মামলা গ্রহণ করেছিলাম। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তরুণী ও তার মাকে বাড়ি থেকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছিল। শুক্রবার আদালতে পাঠালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ২২ ধারায় তিনি জবানবন্দি দিয়েছেন।
‘তবে আজকে বন্ধের দিন হওয়ায় অর্ডারশিটের কপি আমরা পাব না। তাই জবানবন্দিতে কী উল্লেখ করেছেন, আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কী আদেশ দিয়েছে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। আগামী রোববার অর্ডারশিট পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
তিনি জানান, জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত ওই তরুণীকে তার পরিবারের জিম্মায় দিয়েছে।
বুধবার দুপুরে খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলার আবেদন করেন ওই তরুণীর দূরসম্পর্কের খালাতো ভাই পরিচয় দানকারী এক ব্যক্তি। বিকেলের দিকে ওই আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোসাম্মৎ দিলরুবা সুলতানা মামলাটি এজাহার হিসেবে নেয়ার জন্য ডুমুরিয়া থানাকে নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের চাচাতো ভাই রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামান ও গাজী আবদুল হক এবং আল আমিন গাজী, আক্তারুল আলম (সুমন), সাদ্দাম গাজী ও মো. ইমরান হোসাইন।
এর মধ্যে এজাজ আহমেদ ধর্ষণ ও অন্যরা অপহরণ মামলার আসামি। মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন ১০-১৫ জন। মামলাটি করেন ওই তরুণীর ভাই পরিচয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা ব্যক্তি।
আদালতে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে আসছিলেন। গত ২৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে আটটার দিকে এজাজ আহমেদ ওই তরুণীকে শাহপুর বাজারে অবস্থিত তার নিজস্ব কার্যালয়ে ধর্ষণ করে তাড়িয়ে দেন। পরে তরুণী ঘটনাটি তার দূরসম্পর্কের খালাতো ভাইকে জানালে সেই ভাই তরুণীতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এতে বলা হয়, পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তরুণীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠায়। পরের দিন ওসিসির সামনে থেকে আসামি তৌহিদুজ্জামাসহ ১০-১৫ আসামি তরুণী ও তার মাকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এর পর ওই তরুণী ও তার মাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অপহরণ করা হয়নি মর্মে স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য সোনাডাঙ্গা থানায় নেয়া হয়। পরে আবার সেখান থেকে মাইক্রোবাসে করে তাদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিষয়টি খুলনাসহ সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও সোনাডাঙ্গা ও ডুমুরিয়া থানা-পুলিশ ওই তরুণী ও তার মাকে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাঁদর উদ্ধারের জন্য ডুমুরিয়া থানায় মামলা করতে গেলে থানা থেকে মামলা নেয়া হয়নি। এ কারণে আদালতে মামলা করা হয়েছে।