বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েছেন ওসি?

ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা না নিয়ে ওসি তাদের পাঠিয়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। শুধু তাই নয়, বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশও দেন তিনি। পরে চেয়ারম্যান মিমাংসা করতে ব্যর্থ হলে আদালতের দারস্ত হন ভুক্তভোগীর স্বজনরা।

নাটোরের বড়াইগ্রামে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ছয়জন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ ও ঘটনার ভিডিও ধারণ করার ঘটনায় মাস পেরুলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে অভিযুক্তরা। ঘটনার পর থানায় মামলা করতে গেলেও তা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খানের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা না নিয়ে ওসি তাদের পাঠিয়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। শুধু তাই নয়, বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশও দেন তিনি।

পরে চেয়ারম্যান মিমাংসা করতে ব্যর্থ হলে আদালতের দারস্ত হন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও ওসি শফিউল আজম খানের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে পূর্ব পরিচয় থাকা বাগাতিপাড়ার দশম শ্রেণীর স্কুলশিক্ষার্থীকে কৌশলে ডেকে নেয় পাশ্বকর্তী বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া গ্রামের পারভেজ হোসেন নামের এক যুবক। পথিমধ্যে নির্জন রাস্তায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই অপেক্ষমান পারভেজ ও তার পাঁচ বন্ধু সাগর, মোহন, প্রসনজিৎ, রতন ও কৃষ্ণ মিলে ভুক্তভোগীকে মুখ চেপে ধরে পাশের পেয়ারা বাগানে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয়াসহ ঘটনাটি জানাজানি হলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাও দেয়া হয়।

ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, এ ঘটনায় বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করতে গেলে ওসি শফিউল আজম খান মামলা না নিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেন জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবরের কাছে। ওসির কথামতো সেখানে কয়েক দফায় আপস-মিমাংসার চেষ্টা করা হয়। এরমধ্যে বারবার মিমাংসার আশ্বাস, ওসি ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা হয়ে পড়ে ভুক্তভোগীর পরিবার। এভাবে কেটে যায় আরও কিছুদিন।

মামলা না নিয়ে আপস-মিমাংসায় ওসির অপতৎপরতার কথা উঠে আসে ভুক্তভোগীর স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কথায়। তবে নিজের প্রতি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি শফিউল।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘থানায় গিয়ে আমার মেয়ের ওপর নির্মম নির্যাতনের কথা বলতেই ওসি বলেন- এটা কোনো বিষয়ই না। মামলা নেয়া যাবে না। আপনারা চলে যান।

‘ওসির এমন কথায় চিন্তায় পড়ে যাই। শেষে ওসির কথামতো চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম। চেয়ারম্যানও কোনো সমাধান দিতে পারল না। শেষমেষ কোর্টে গিয়ে মামলা করি।’

ভুক্তভোগীর দুলাভাই বলেন, ‘মামলা করতে থানায় গেলে মামলা না নিয়ে বরং ধমক দিয়ে বের করে দেন ওসি।’

জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, ‘ফোন করে ওসি আমাকে দুইপক্ষকে নিয়ে বসে ধর্ষণের বিষয়টি মিমাংসা করে দিতে বলেন। ওসির কথামতো বাদী-বিবাদী দুপক্ষকে নিয়ে কয়েক দফা বসেও বিষয়টি সামাধান করতে পারিনি। পরে ভুক্তভোগীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি।’

বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। বারবার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মামলা করাতে পারেনি পুলিশ।’

এ সময় চেয়ারম্যানকে দিয়ে আপস-মিমাংসার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে সরেজমিনে গিয়ে অভিযুক্তদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে গা ঢাকা দেন তাদের স্বজনরাও।

নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মামলা না নেয়াসহ পুলিশের কারও কোনো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগীর পরিবার আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন জানান, বুধবার আদালতের নির্দেশনার কপি হাতে পেয়েছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর