অস্বস্তির বাজারে যখন বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, ঠিক সে সময়ই পঞ্চগড়ে কৃষকের খেত থেকেই রাতের আঁধারে চুরি হচ্ছে পেঁয়াজ।
উত্তরের এ জেলার তেঁতুলিয়া দেবীগজ্ঞ এবং সদরের কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন অনেক কৃষক।
কৃষকরা নিজ পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছলতা পেতে এবার পেঁয়াজ আবাদে ঝুঁকেছেন। তবে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ তোলার মৌসুমেই বিপাকে পড়েছেন তারা।
কৃষকরা বলছেন, রাতে তিন থেকে চার কাঠা জমিতে লাগানো পেঁয়াজ তুলে পাতাগুলো কেটে ফেলে রাখে চোরেরা। এক কাঠা জমিতে প্রায় ৮ থেকে ৯ মন পেঁয়াজ হয়ে থাকে। ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বর্তমান নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এক কাঠা জমিতে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হয় বলে জানান তারা।
রসুনের দামও অনেক বেশি। অনেকের পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুনও চুরি হয়েছে। নদ নদীর তীরবর্তী পলিময় জায়গা সহ বসত বাড়ির সঙ্গের জায়গাগুলোতেও এবার আবাদ হয়েছে প্রচুর পেঁয়াজ।
অনেক কৃষক ধান বিক্রি করে পেঁয়াজ চাষ শুরু করেছেন বলে জানান তারা। কষ্টের ফসল চুরি হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে অনেক চাষি।
তারা জানান, রাতে অনেকে পাহারা দিলেও বাড়তি ব্যায় মেটাতে পাহারাদার রাখার ব্যবস্থা করতে পারছেন না অধিকাংশ কৃষক। এ বিষয়ে প্রশাসন বা স্থানীয় জন প্রতিনিধিরাও অস্বস্তিতে রয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায, এ বছর জেলার ৫ উপজেলায় মোট ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, উপজেলায় গত বছর পেঁয়াজের আবাদ হয়ে ছিল ১৮০ হেক্টর। চলতি বছরে ২১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ডাক্তার পাড়া গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, আমি গরিব মানুষ। মানুষের জমি জমা নিয়ে আমি কোনরকম কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমি এক বিঘা জমির বর্গা নিয়ে তাতে আলু,রসুন ও পেঁয়াজের আবাদ করেছি৷ পেঁয়ার চাষ করেছি ২ কাঠার মতো।
তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে সেচ দিয়ে পেঁয়াজ বড় করেছি৷ ঘরে তুলব পেঁয়াজ, এমন সময় রাতের আঁধারে আমার খেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়েছে৷ এতে আমি বিপাকে পড়েছি৷
একই কথা বলেন ওই ইউনিয়নের ভদ্রেশ্বর ব্রম্মতোল গ্রামের কৃষক বিপ্লব কুমার রায়। তিনি বলেন, আমি ভালো জাতের পেঁয়াজের আবাদ করছিলাম। হঠাৎ রাতের আঁধারে আমার খেত থেকে পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে গেছে। সকালে খেতে গিয়ে দেখি পুরো খেত ফাঁকা, শুধু পড়ে আছে পেয়াজের গাছগুলো। যার এটা করেছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই প্রশাসনের কাছে।
এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙা এলাকার কৃষক আব্দুল হালিম, শরিফুল হক বলেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক। তাই এবার পেঁয়াজের আবাদ করছি। কিন্তু যে ভাবে পেঁয়াজ চুরি হচ্ছে এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছি৷ রাতে কয়েক বার করে খেতে গিয়ে পাহারা দিতে হচ্ছে। আমরা অনেকে আতঙ্কে আছি৷
এদিকে এমন চুরি ঘটনায় বাজার ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করছে কৃষি বিভাগ। তবে চুরি ঠেকাতে কৃষকদের ফলন উত্তোলনের আগ পর্যন্ত মাঠ পরিদর্শনসহ সচেতন থাকার পরামর্শ তাদের।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌস বলেন, দিন দিন এ উপজেলায় কৃষকরা বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি পেঁয়াজের বীজও বিনা মূল্যে দিয়েছি। দিন দিন এ উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি উপজেলার ভজনপুর ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পেঁয়াজ চুরির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি অনেক দুঃখজনক।
তিনি বলেন, শুরু থেকে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি৷ যেহেতু এখন পেঁয়াজ তোলার সময় হয়েছে, তাই কৃষকদের পেঁয়াজ খেত পাহারা দিয়ে রাখার পাশাপাশি খোঁজ খবর ও নজরদারির বিষয়ে সচতেন ও পরামর্শ দিচ্ছি।