জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলা হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতার নামটা মুছে ফেলা হয়েছিল। কোনো ছবি দেখানো যেত না। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ। যে স্লোগান দিয়ে লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছে, তার সব নিষিদ্ধ।
“এমনকি ইতিহাস লিখতে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম আসবে…একটা বইয়ে অনেক ছবি। আমার এখনও মনে আছে। তার মাঝখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছবি। সেটা একটা কাগজ দিয়ে ঢেকে আঙুল দিয়ে চেপে ধরে দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনে, কিন্তু ওই ছবিটা দেখানো যাবে না। নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে কখনও মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। আজকে সেটাই প্রমাণ হয়েছে।
“সেই ৭ মার্চের ভাষণ আজকে আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান আজকে আমাদের জাতীয় স্লোগান।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতা হঠাৎ করে আসেনি। দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা এসেছে। বঙ্গবন্ধু জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কাজ করে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ৬৯ সালের অক্টোবর মাসে আমার বাবা লন্ডনে গিয়েছিল। তিনি (বঙ্গবন্ধু) মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডনে আমাদের কাছে বেড়াতে যান। সেখানে বসে তিনি নির্বাচন হবে, নির্বাচনের রেজাল্ট আসবে, ওরা ক্ষমতা দেবে না। আমাদের যুদ্ধ করতে হবে এসব নিয়ে কথা বলেন। যুদ্ধের প্রস্তুতিটা আমি একজন সাক্ষী এখনও আছি। তিনি পরিকল্পনা করেন। ভারতের দুজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করেন। আমাদের গেরিলা যুদ্ধ হবে, সেখানে শরণার্থী গেলে কীভাবে আশ্রয় হবে, প্রবাসী বাঙালিরা কী কী কাজ করবে, সমস্ত পরিকল্পনা তিনি করে আসেন।
‘পাকিস্তানিরা নাজমুল হকের (মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন) কাছে জিজ্ঞেস করেছে— ৭ মার্চের ভাষণের শেখ মুজিব কী কথা বলেছিল? সেটার ব্যাখ্যা চেয়েছিল। ৭ মার্চের ব্যাখ্যা খুঁজতে খুঁজতেই তাদের (পাকিস্তানি) সময় গেছে। তিনি (বঙ্গবন্ধু) কী বলে গেলেন? কী হয়ে গেল? বাংলাদেশের মানুষ অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করল। এটাই ছিল তাদের (পাকিস্তানি) বক্তব্য। একজন নেতার ভাষণ মানুষকে শুধু উদ্বুদ্ধ করেনি, গেরিলা যুদ্ধের শুধু প্রস্তুতি দেয়নি, একটা যুদ্ধের বিজয় এনে দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মার্শাল ল’র মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশের অনেক রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তি বিরোধিতা করেছিলন। সেই শর্ত মেনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তার (বঙ্গবন্ধু) কথা ছিল, কে এ দেশের নেতৃত্ব দেবে এটা আগে জনগণ ঠিক করুক।’
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।