চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার ইছানগরে এস আলম চিনি পরিশোধন কারখানায় আগুন জ্বলছে তিন দিন ধরে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, কারখানার আগুন পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে।
এদিকে কারখানার ওই গুদামে ছিল এক লাখ টন আমদানি করা চিনির কাঁচামাল। এর পুরোটাই গলে অগ্ন্যুৎপাতের লাভার আকারে নেমে আসছে কর্ণফুলী নদীতে। এর প্রভাবে মারাত্মক দূষণে নদীতে ভেসে উঠছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী।
কর্ণফুলী নদী এমনিতেই নানা বর্জ্যে দূষণকবলিত। এ নদীতে এমনিতে বড় মাছ মেলে না। কিন্তু বুধবার সকাল থেকে নদীর দুই তীরে মাছ ভেসে উঠতে দেখে কয়েক শ’ মানুষ নেমে পড়ে মাছ ধরতে।
স্থানীয়দের মতে, পোড়া চিনির বর্জ্য নদীতে এসে পড়ার কারণেই মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোড়া চিনির বর্জ্যের কারণে নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে গেছে। আর পানিতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পেয়ে মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী ভেসে উঠছে।
বছরের পর বছর ধরে নানা রকম দূষণের কারণে গত এক দশক ধরে কর্ণফুলীতে বড় আকারের মাছ আর তেমন নেই। ছোট যে কয়েক প্রজাতির মাছ প্রতিকূল এই পরিবেশে টিকে আছে, সেগুলোও চিনি পোড়া রাসায়নিক দূষণে নিঃশেষ হতে বসেছে।
নদীর এ অংশের ঠিক বিপরীতে এস আলম চিনি কলের গুদামে সোমবার আগুন লাগার পর পোড়া অপরিশোধিত চিনি গলে স্রোতের আকারে নেমে আসছে নদীতে। পোড়া চিনিও ফেলা হয় নদীতে। এরপর মঙ্গলবার বিকেল থেকে নদীর দুই তীর ঘেঁষে মাছ ভেসে উঠতে শুরু করে।
এস আলম কারখানায় আগুনের কারণে গলে যাওয়া চিনির স্রোত নেমে আসছে কর্ণফুলী নদীতে। ছবি: সংগৃহীত
এস আলম সুগার মিল নদীর যে পাশে অবস্থিত, সেই দক্ষিণ পাড়ে বুধবার সকালেও মাছ ভাসতে দেখা যায়। পাশাপাশি নদীর উত্তর পাড়ে নগরীর অংশেও তীর ঘেঁষে মাছ ভাসতে দেখা যায়।
স্থানীয় লোকজন তখন নদীর উত্তর পাড়ে ফিশারিঘাট ও ব্রিজঘাট এলাকায় এবং দক্ষিণ পাড়ে চর পাথরঘাটার বাংলাবাজার অংশে মাছ ধরতে নদীতে নেমে পড়ে।
তাদের টানা জাল ও নেটে চিংড়ি, গুলশা, টেংরা, বাইন মাছের পাশাপাশি কাঁকড়া ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী উঠে আসে। নদীর তীরের কাছে এসব মাছ ভাসতে এবং তীরের কাদায় আটকে থাকতে দেখা যায়। অনেকে খালি হাতেও মাছ ধরেন।
পোড়া চিনির বর্জ্যে নদীর দক্ষিণ পাড়ে বাংলাবাজার খাল ও ঘাট সংলগ্ন অংশের পানি ঘোলাটে বাদামি রঙ ধারণ করেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরীক্ষাগারের চিফ কেমিস্ট কামরুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গতকালই (মঙ্গলবার) আমরা নদীর পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়েছি। নদীর পানিতে ডিও (দ্রবীভূত অক্সিজেন) কমে গেছে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নদীতে যেন আর পোড়া অপরিশোধিত চিনি না পড়ে সেজন্য তারা পোড়া তরল বালি দিয়ে চাপা দেয়ার কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে।’
মাছ ভেসে ওঠার বিষয়টি জানার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম পানির মান জানতে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের একটি দল নদীর পানির ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল কমপোনেন্টের টেস্ট করছে। পানিতে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। দ্রবীভূত অক্সিজেন দ্রুত কমে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নানামুখী দূষণের কারণে কর্ণফুলীতে এমনিতেই বড় কোনো মাছ এখন আর দেখা যায় না। কয়েক বছর আগেও আইড় জাতীয় বিভিন্ন মাছ মিলত এখানে। সেগুলোও এখন আর নেই। নদীতে এখন শুধু গুলশা, টেংরা, চিংড়ি আর কাঁকড়া টিকে আছে। সেগুলোও অক্সিজেন না পেয়ে ভেসে উঠছে।’