আইনের আওতায় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্তি ও সংস্থার দায়ভার নির্ধারণ করে বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাণহানি আর ঘটবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার সকালে রাজধানীতে সাদেক হোসেন খোকা সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রের (কমিউনিটি সেন্টার) ৪র্থ তলায় স্থাপিত অত্যাধুনিক সাউথ পয়েন্ট নগর ব্যায়ামাগার উদ্বোধন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শেখ তাপস বলেন, আমরা দেখি কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে, এক সংস্থা আরেক সংস্থার বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে দায় চাপানোর চেষ্টা করে। তদন্ত হয়, দায়সারা তদন্ত। আইনের আওতায় সুনির্দিষ্ট দায়ভার নির্ধারণের তদন্ত কিন্তু আমরা সচরাচর দেখি না।
তিনি বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করব, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এই দুর্ঘটনার দায়ভার নিশ্চিত করার এবং আদালতের মাধ্যমে এর বিচার সম্পন্ন করার। একটি নজির যদি আমরা সৃষ্টি করতে পারি, তাহলেই সকলের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে, প্রয়োগ হবে।
মেয়র বলেন, এতে কারো মুখের কথায় ঢালাওভাবে অন্যের ওপর দায়ভার চাপানোর অপচেষ্টা যেমনি রোধ হবে তেমনি এ ধরনের দুর্যোগ, দুর্ঘটনা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো এবং এ ধরনের প্রাণহানি আর ঘটবে না।
সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও আইন অনুযায়ী দায়ভার নির্ণয় এবং প্রয়োগ করা আবশ্যক জানিয়ে তাপস বলেন, সারাবিশ্বেই আইন দ্বারা এগুলো নির্ধারিত রয়েছে। আইন বলে, যে যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে সে সে কারণের জন্য যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হবে। এটাকে আইনের ভাষায় বলে ভাইকেরিয়াস লায়াবিলিটি।
তিনি বলেন, সারাবিশ্বেই ভাইকেরিয়াস লায়াবিলিটি ও ডিউটি অফ কেয়ার এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট দায়ভার আইনে দেয়া আছে। যেহেতু বাংলাদেশ কমনওয়েলভুক্ত দেশ, সুতরাং, স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ উপনিবেশের এই আইন এখানে প্রয়োগযোগ্য।
আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী দায়ভার নির্ধারণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া কীভাবে নির্দিষ্ট করা আছে তা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আমরা যদি দেখি, তাহলে প্রতীয়মান হয় সেখানকার সিঁড়িটা পর্যাপ্ত প্রশস্ত ছিল না। একটি ৯/১০ তলা ভবন নির্মাণে কতগুলো সিঁড়ি থাকবে এবং সিঁড়ির প্রশস্ততা কত হবে তা ইমারত বিধিমালায় সুনির্দিষ্ট করা আছে।
তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হলো, এই বিধিমালা প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম দায়ভার কার? প্রথম দায়ভার হলো একজন স্থপতির। কারণ, সারাবিশ্বে আইনের আওতায় বলা আছে -যিনি পেশার সেবা দেবেন তাকে যথাযথভাবে আইন, নীতিমালাগুলো পরিপালন করতে হবে। তাহলে বিধিমালা অনুযায়ী সিঁড়িসহ কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে, কতটুকু জায়গা ছাড়তে হবে, জরুরি প্রয়োজনে কিভাবে বহি:র্গমন হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো নকশা প্রণয়নকারী স্থপতি নির্ধারণ করবেন।
মেয়র বলেন, দ্বিতীয় দায়ভার হলো সে সংস্থার, যে সংস্থা এই নকশাটা অনুমোদন করেছে। নকশা অনুমোদনকালে আইন, বিধিমালা পরিপালন করা হয়েছে নাকি? যদি সেখানে কোনো ব্যত্যয় বা অবহেলা বা কোনো গাফিলতি থাকে, তাহলে সেই কর্তৃপক্ষকে দায়ভার নিতে হবে। তৃতীয়ত, একটি ভবন নির্মাণে অনেক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র বা অনুমতি নিতে হয়।
তিনি বলেন, এ ধরনের ছাড়পত্র প্রদানে যদি কোনো সংস্থার অবহেলা বা গাফিলতি থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের দায়ভার নির্ণয় করা হবে। এছাড়াও আইনের ভাষায় অকুপায়ার্স লায়াবিলিটির আলোকে সংশ্লিষ্ট ভবন মালিক, ভবন ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা রেস্তোরাঁ মালিকদেরও দায়ভার রয়েছে। সুতরাং, আইনের আওতায় দায়ভার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ সকল বিষয়ই তদন্তে আসা উচিত।
সাউথ পয়েন্ট নগর ব্যায়ামাগারে আধুনিক সুবিধা সন্নিবেশ করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই ব্যামাগার পরিচালিত হবে, যাতে করে স্বল্পমূল্যে নগরবাসী এখানে শরীরচর্চা করতে পারে। এখানে স্টিম বাথ, সওনা বাথসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা ও যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা রয়েছে। ১০ হাজার বর্গফুট জায়গার মধ্যে পুরুষ এবং নারীরদের জন্য আলাদাভাবে ব্যায়াম করার সুযোগও এখানে রয়েছে।