জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ৬৫ দালালকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এদের মধ্যে ৫৮ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
সোমবার বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের বাগান গেটে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। এর আগে সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এই অভিযান চলে।
র্যাব বলছে, হুট করে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। দীর্ঘ এক মাস ধরে তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে। পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেগুলো শেয়ার করা হয়েছে। তারপরই এই অপারেশন।
আটককৃতদের ভিডিও এবং কল রেকর্ড র্যাবের কাছে আছে বলেও জানান র্যাবের এই অধিনায়ক।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগীদেরকে জিম্মি করে দালালদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে ডিজি মহোদয়ের নির্দেশক্রমে সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
‘৬০ থেকে ৬৫ জন দালালকে আমরা ইতোমধ্যে ধরতে পেরেছি। এরা বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক, ওয়ার্ড, বহির্বিভাগ আর জরুরি বিভাগ থেকে রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় এই মেডিক্যালে সিট পাইয়ে দেয়ার জন্যও দালালরা টাকার লেনদেন করছে। অনেকদিন ধরে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়েছি এবং উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে এসব দালাল চক্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
র্যাবের এই অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা খুব অল্পসংখ্যক দালালকে আজ ধরতে পেরেছি। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেড় শ’ থেকে দু শ’ দালাল সক্রিয় রয়েছে।
‘এটি বিশাল একটি চক্র। দীর্ঘদিন ধরে তারা অসহায় রোগীকে জিম্মি করে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছে। আমাদের এই অপারেশন চলমান প্রক্রিয়া।
‘দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে পর্যায়ক্রমে সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। সাধারণ রোগীরা যেন কোনো হয়রানির শিকার না হয় তা আমরা নিশ্চিত করব।’
ভবঘুরে-মাদকাসক্ত থেকে ব্লাড সংগ্রহ করে মাছ রাখার ফ্রিজে সংরক্ষণ
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্লাড ব্যাংক নিয়ে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য আমরা পেয়েছি। ব্লাড ব্যাংকের দালাল চক্রের হোতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জেনেছি, ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত যারা রাতের বেলা ঘুরে বেড়ায় তাদেরকে ডেকে এনে তাদের কাছ থেকে ব্লাড সংগ্রহ করা হয়। তারা অনেক সময় মাছের আড়তের কার্টনে এসব ব্লাড সংরক্ষণ করছে এবং পরবর্তীতে বিক্রি করছে।’
জড়িত হাসপাতালের কর্মচারী-স্টাফও
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ‘দালালদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদেরকে সহযোগিতা করে এরকম ঢামেকের চতুর্থ শ্রেণীর বেশ কিছু কর্মচারীর নাম আমরা জেনেছি, স্টাফদেরও নাম আমরা পেয়েছি। এগুলো আমরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, তারা তাদের আইন মোতাবেক কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দালাল চক্রের এসব কর্মকাণ্ডে কোনো চিকিৎসকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ আমরা পাইনি।’
র্যাবের পক্ষ থেকে হাসপাতালের কর্মচারী-স্টাফদের কোনো তালিকা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ওনারা যখন অভিযান পরিচালনা করেছেন তখন আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। কালকে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে আমার কোনো কর্মকর্তাকে তালিকা দেয়া হয়েছে কিনা। এরকম কোনো তালিকা পেলে আমরা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’