আসন্ন রমজানে মাকে ইফতার সামগ্রী কিনে দেয়া হলো না জিহাদ শিকদারের। মায়ের সঙ্গে শেষ কথা হয় বৃহস্পতিবার দুপুরে। আর শুক্রবার দুপুরে মায়ের সামনে আসে জিহাদের মরদেহ।
রাজধানীর বেইলি রোডে বৃহস্পতিবার রাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান মাদারীপুরের কালকিনির জিহাদ। তিনি কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে সার্ভিস বয় হিসেবে কাজ করতেন। তার মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিটিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার।
পরিবারের হাল ধরতে তিন বছর আগে রাজধানীর বেইলি রোডে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে শ্রমিক হিসেবে যোগ দেন জিহাদ শিকদার। তার উপার্জিত বেতনে চলত গ্রামের বাড়িতে মা-বাবার সংসার। বৃহস্পতিবার রাতে রেস্টুরেন্টে কাজ করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা যান তিনি।
শুক্রবার দুপুরে জিহাদ শিকদারের মরদেহ কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের আলিমাবাদ গ্রামে এলে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। সন্তানহারা মা-বাবা পাগলপ্রায়। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। জিহাদের অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
২০২০ সালে মোল্লারহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকায় যান জিহাদ। এরপর সাহেবরামপুর কবি নজরুল ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। এবার তার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল।
মা রহিমা বেগম আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার পোলা এবার রোজায় ইফাতারি কিনে দিতে পারলো না। সে আমাকে ফোনে বললো- মা কয়েকদিন পরে বেতন পাইয়া ইফতারির জন্যে টাকা পাঠাবো। সেটা আর হলো না…।’
জিহাদের ছোট ভাই রিয়াদ জানায়, মাদারীপুরের কালকিনির সাহেববারপুর কবি নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ালেখা করতেন জিহাদ। সংসারে মা-বাবা ও এক ভাই রয়েছে। বড় বোন থাকেন স্বামীর বাড়িতে।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘এমন মর্মান্তিক ঘটনায় সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই। জিহাদের পরিবার থেকে কোনো সহযোগিতা চাওয়া হলে সবসময় পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসন।’