‘আমার মেয়ে মালয়েশিয়া ফিরে যাবে। তাই তারা দুই বোন এবং আমার ভায়রা ভাইয়ের মেয়েসহ প্রথমে পিৎজা হাটে যায়। সেখানে কার্ড পাঞ্চ করে। আগুনের ঘটনা শুনে প্রথমে আমরা নিশ্চিত হই, আমার মেয়েরা ভালো আছে। পরে হঠাৎ ফোন আসে।
‘মেয়েরা চিৎকার করতে করতে বলে, বাবা আমরা বেইলি রোডে কাচ্চি ভাইয়ে যাই। এখানে আগুন লাগছে। আমাদের বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার করছিল। দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখি, আমার দুই মেয়েসহ আমার ভায়রা ভাইয়ের মেয়ের মরদেহ পড়ে আছে। আমি এ শোক কেমনে সইব?’
কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার বেইলি রোডে বৃহস্পতিবার রাতের আগুনে প্রাণ হারানো ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশার বাবা হাজি কোরবান আলী। ওই আগুনে প্রাণ গেছে ৪৬ জনের।
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ায় স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়তেন রিয়া। আর আলিশা ভিকারুননিসা নূন স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
ওই দুজনের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে প্রাণ হারান তাদের খালাত বোন কুমিল্লা সদর উপজেলার আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে নুসরাত জাহান নিমু, যিনি ঢাকা সিটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন।
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের চরবাড়িয়া এলাকায় গ্রামের বাড়িতে শুক্রবার সকালে নেয়া হয় ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশার মরদেহ। তাদের খালাত বোন নিমুর মরদেহ নেয়া হয় আদর্শ সদর উপজেলার হাতিগড়া এলাকার গ্রামের বাড়িতে।
ওই সময় স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে বাড়ির পরিবেশ। দূরদুরান্ত থেকে স্বজনরা আসেন সান্ত্বনা দিতে।
দুই মেয়ে হারিয়ে পাগলপ্রায় পোশাক ব্যবসায়ী কোরবান আলী। তার ভাই লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি প্রথমে যারা বেঁচে ছিলেন তাদের বিল্ডিং থেকে নামানো হচ্ছে। যখন জীবিতদের নামানো শেষ হয়েছে, তখন কলিজা মোচড় দিয়ে ওঠে। আমার ভাতিজিরা আর বেঁচে নেই।’
জুমার নামাজ শেষে প্রথমে নিমুকে এবং পরে বিকেল চারটার দিকে রিয়া ও আলিশাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।