বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘লাফ না দিলে আমিও হয়তো পুড়ে কয়লা হতাম’

  •    
  • ১ মার্চ, ২০২৪ ১৫:১৭

আগুন ধরার পরের পরিস্থিতি নিয়ে মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘অনেকবার চেষ্টা করি লাফ দিতে; পারিনি, কিন্তু পেছনে অনেকের বাঁচার আকুতি ও পুড়তে থাকা দেখে বেঁচে ফেরার চিন্তায় গত রাতে লাফ দিয়েছিলাম। নইলে আমিও হয়তো পুড়ে কয়লা হতাম মিনহাজ ভাইয়ের মতো।’

“কেবল খাবার অর্ডার করে বসেছি। হঠাৎ চিৎকার, চেঁচামেচি। ধোঁয়া দেখি। একটু পর বিকট শব্দ। বেরিয়ে দেখি নিচে আগুন। ওপরে উঠে যাই। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চারদিকে অন্ধকার আর প্রচণ্ড ধোঁয়া।

“মানুষের ছোটাছুটির মধ্যে দেখি অনেকে পুড়ছিল। অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি অনেককে। নিজে বাঁচার অনেক চেষ্টা করি। ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টের রান্না ঘরের জানালা দিয়ে কার্নিশ থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ি। এরপর আমাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।”

রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁর ভবনে বৃহস্পতিবার ধরা আগুনের ঘটনা নিয়ে শুক্রবার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মোহাম্মদ আমিন।

গতকাল রাতের আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সেই আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া একজন বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ছাত্র আমিন।

আগুন ধরার পরের পরিস্থিতি নিয়ে এ যুবক বলেন, ‘অনেকবার চেষ্টা করি লাফ দিতে; পারিনি, কিন্তু পেছনে অনেকের বাঁচার আকুতি ও পুড়তে থাকা দেখে বেঁচে ফেরার চিন্তায় গত রাতে লাফ দিয়েছিলাম। নইলে আমিও হয়তো পুড়ে কয়লা হতাম মিনহাজ ভাইয়ের মতো।’

তিনি বলেন, “আমি আর মিনহাজ ভাইসহ বেশ কয়েকজন গিয়েছিলাম বেইলি রোডে। আমি আর মিনহাজ ভাই উঠে যাই ভবনটির চতুর্থ তলায় ‘খানা’স রেস্টুরেন্টে’। আমরা সেখানে বসি। খাবার অর্ডার দিয়ে সেলফিও তুলি। এর কিছুক্ষণ পর চারদিকে চিৎকার চেঁচামেচি আর ধোঁয়া দেখতে পাই।

“কিছুক্ষণ পর চেঁচামেচি-চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ পাই। তখন রাত ৯টা ৫০ মিনিটের মতো। সিঁড়ি ধোয়ায় আচ্ছন্ন। ওপরে দ্রুত উঠতে থাকি। এর মধ্যেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ছুটোছুটিতে মিনহাজ ভাইকে হারিয়ে ফেলি। মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে ওপরে উঠি। আবার নিচে নামি। দেখি নিচে সব জ্বলছে।”

এ যুবক বলেন, “অনেকক্ষণ মিনহাজ ভাইকে খুঁজেছি, পাইনি। ফ্লোরে ফ্লোরে কান্নার আওয়াজ, চিৎকার আর বাঁচার আকুতি শুনেছি। মোবাইলের আলোতে দেখেছি অনেককে পুড়তে। ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আকুতি কানে বাজছিল।”

আমিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই সৌমিত আহমেদ অরণ্য বলেন, ‘গতকাল রাতে ছোট ভাই আমিন, মিনহাজসহ কয়েকজন রাজধানীর বেইলি রোডে গিয়েছিলাম খেতে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট ভবনে। আমিন আর মিনহাজ ছিল ওপরে। আমরা কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট থেকে নেমে বাইরে যাই। আমার মা বাড়ি যাবে। এ জন্য আমি আরেক বন্ধু মেহেদি হাসান রিফাতকে নিয়ে শ্যামলী যাই।

‘সাড়ে ১০টার দিকে আমিন ফোন করে জানায় যে, সে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের রান্নাঘরের পাশ দিয়ে ওপর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েছে। এরপর সে দাঁড়াতে পারতেছে না; ওপরে মিনহাজ। কোমরে ব্যথা পেয়েছে। এরপর আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ফিরে আসি এবং ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমিনকে রেসকিউ করে হাসপাতালে পাঠাই।’

অরণ্য আরও বলেন, ‘একাধিকবার আমরা মিনহাজের মোবাইল ফোনে কল করেছি, কিন্তু কল রিসিভ হয়নি। সারা রাত ধরে মিনহাজকে খোঁজ করেছি; হাসপাতালে খুঁজেছি৷ সর্বশেষ কয়লা হয়ে যাওয়া একটা লাশ আমরা দেখতে পাই। সেই লাশের হাতের ঘড়ি দেখে মিনহাজের মরদেহ শনাক্ত করি আমরা।’

এ বিভাগের আরো খবর