‘আমার ছেলেটা তো ভালোই ছিল। ও কেন হাসপাতালে? আমাকে ওরে একবার দেখতে দেও। আমি মিনহাজরে নিয়ে বাসায় যাব। তোমরা আমাকে বল মিনহাজের কী হয়েছে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগের সামনে মা আমেনা বেগমের এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর যেন জানা নেই স্বজনদের।
রাজধানীর বেইলি রোডে বৃহস্পতিবার রাতে লাগা আগুনে প্রাণ হারান মিনহাজ উদ্দিন।
বড় ভাই ও একই অফিসের সহকর্মী আনিসুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিনহাজরা তিন ভাই। রাজধানীর বাসাবোতে বড় ভাই মেহেদীর বাসায় থাকত সে। পড়াশুনা শেষ করে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে বছরখানেক ধরে চাকরি করছিল ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মিনহাজ।’
বন্ধু সৌমিত আহমেদ অরণ্য বলেন, ‘গতকাল রাতে ছোট ভাই আমিন, মিনহাজসহ কয়েকজন রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলাম। আমিন আর মিনহাজ ছিল উপরে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে। আমার মা বাড়ি যাবে এ জন্য আমি আরেক বন্ধু মেহেদি হাসান রিফাতকে নিয়ে শ্যামলী যাই।
‘আমিন ফোন করে জানায় যে, সে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের রান্না ঘরের পাশ দিয়ে ওপর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েছে। উপরে মিনহাজ।’
অরণ্য বলেন, ‘একাধিকবার আমরা মিনহাজের মোবাইল ফোনে কল করেছি কিন্তু কল রিসিভ হয়নি। সারা রাত ধরে মিনহাজকে খোঁজ করেছি হাসপাতালে খুঁজেছি৷ সর্বশেষ হাতের ঘড়ি দেখে মিনহাজের মরদেহ শনাক্ত করা হয়।’
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মিনহাজ উদ্দিনের বাড়ি চাঁদপুর সদরের ইসলামপুর গ্রামে। বাবা ওলিউল্লাহ খান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, মা আমেনা বেগম গৃহিণী।
ঢামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে দেখা যায় মিনহাজের পরিবারের স্বজনদের।
মিনহাজের বাবাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার মিনহাজ কই, ওরে আইনা দেও, একটু দেখব। ওর তো বাড়ি যাবার কথা ছিল। ও তে বাড়ি যাবে। ওকে নিয়ে আজই বাড়ি যাব।’
তবে এ ফেরাই যে বাড়িতে শেষ ফেরা সেটা তখনও জানেন না বাবা ওলিউল্লাহ ও মা আমেনা।
বড় ভাই মেহেদী হাসান জানান, ‘মিনহাজকে দেখার পর দুনিয়াটা এলোমেলো হয়ে গেছে। তরতাজা ছেলে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। দেখে বোঝার উপায় নাই। হাতের ও একটা ঘড়ি পরতো। সেটা দেখেই শনাক্ত করেছি। এরপরও হাসপাতাল থেকে ডিএনএ স্যাম্পল নিয়েছে। ছাড়পত্র নিয়ে আজই মিনহাজের মরদেহ নেয়া হবে চাঁদপুরে।’