এক মাসের মধ্যে নগরের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বসা হকারদের উচ্ছেদ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
তবে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নির্ধারিত এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও উচ্ছেদ করা হয়নি হকারদের।
সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গত ১৬ জানুয়ারি মেয়র বলেছিলেন, ‘রাজপথে হকার থাকার কারণে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আগামী এক মাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে। সিলেটের রাজপথ অবশ্যই হকার মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে সিলেটের রাস্তাঘাট হকারমুক্ত করা হবে।’
এরপর মাস পেরিয়ে গেলে প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে হকারদের সড়ক থেকে সরাতে না পেরে এবার মেয়র আনোয়ারুজ্জামান বলছেন, রমজানের আগেই হকারদের পুনর্বাসন করা হবে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, এখনও নগর সড়ক আর ফুটপাতগুলো দখল করে আছে হকাররা। হকারদের কারণে ফুটপাত দিয়ে হাঁটা-চলার উপায় নেই পথচারীদের। আর সড়কের অনেকাংশ দখল করে রাখার কারণে তীব্র যানজট লেগেই থাকছে।
ফলে সিলেট নগরের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে উঠেছে হকার।
১৬ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান বলেছিলেন, ‘সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে হকারদের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা চলছে। বিষয়টা আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ নিয়ে আমরা কাজ করতে শুরু করেছি। হকার সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’
এ সমস্যা নিয়ে সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, নগরের লালদিঘীরপাড়ে স্থায়ী পুনর্বাসন করা হবে হকারদের। তাদের গলি ও শেড তৈরি করে দেয়া হবে। এ কাজ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। রমজানের মধ্যে হকারদের পুরোপুরি সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, সিলেট নগরে এখন অন্যতম প্রধান সমস্যা হকার। নগরের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান থেকে শুরু করে সদ্য সাবেক আরিফুল হক চৌধুরীর সময়েও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এই হকার উচ্ছেদ।
আরিফুল হক চৌধুরী নগরভবনের পেছনের লালদিঘীর পাড়ে ‘হলিডে’ মার্কেট চালু করেছিলেন। সেখানে হকারদের পুনর্বাসন ও করা হয়, কিন্তু দেখা যায় কয়েক মাসের মাথায় তারা ফের সড়ক ও ফুটপাতের ওপর চলে আসেন।
বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের নির্বাচনী ইশতেহারেও হকার উচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে।
মহানগরের প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এ সড়কের ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি অংশ হকারদের দখলে রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ কাপড় বিক্রেতা ছাড়াও মাছ এবং সবজি বিক্রেতারাও বসেন সড়ক-ফুটপাতে। খোদ নগরভবনের সামনের অংশ সবজি ও মাছ বিক্রেতারা দখল করে রাখে প্রতিদিন।
ব্যবসায়ী জানান, রাতের বেলা বিদ্যুতের আলোরও সুবিধা পান তারা।
আসন্ন রমজান মাস চলাকালেই মহানগরের সব হকার ফের লালদিঘীর পাড়ের ‘হলিডে’ মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
মেয়র বলেন, ‘এর আগে বহুবার হকারদের পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যত কোনো কাজে আসেনি। আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে এ সমস্যার সমাধানের জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। তারই পরিপ্রেক্ষিতে হকারদের নির্ধারিত স্থানে পুনর্বাসন করে নগরবাসীকে যানজট ও ফুটপাত মুক্ত শহর উপহার দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে লালগিঘির পাড়ে হকারদের জন্য শেড নির্মাণে ইতিমধ্যে ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হবে এবং সিলেটবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।’
লালগিঘিরপাড়ে যাতে বৃষ্টিতে ক্রেতা-বিক্রেতাদরে ভোগান্তি পোহাতে না হয় সে জন্য মাটি দিয়ে গলিগুলো উঁচু করে শেড বানিয়ে দেয়ার কথা জানান মেয়র।
তিনি বলেন, ‘আশা করছি, রমজানে বিনা ভোগান্তিতে ফুটপাত ও সড়কে নগরবাসী এবং পথচারীরা হাঁটতে পারবেন।’
এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মচারী, কতিপয় পুলিশ সদস্যরা টাকা নিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেন। যার কারণে ফুটপাথে বসে যারা ব্যবসা করেন, তারা সন্ধ্যায় বিদ্যুতের আলোরও সুবিধা পান।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যানজট নিরসন ও হকারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি সিসিকের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। যদিও হকার উচ্ছেদের বিষয়টি আমাদের না, তবে সড়কে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে সে হকার হোক আর যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মেয়র কোনো আল্টিমেটাম দিলে সেটা তার বিষয়। তবে সিটি করপোরেশন আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করব।’