মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেসের খাবারের পাওনা টাকা নিয়ে কথাকাটাকাটির পরের দিন এক নারীর মুখ বাঁধা মরদেহ পাওয়া গেছে।
বাড়ির পেছন থেকে শুক্রবার সকালে ৫৫ বছর বয়সী মাবিয়া খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যিনি একটি মেস চালাতেন।
মরদেহের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন থাকায় মাবিয়াকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
প্রাণ হারানো মাবিয়া খুলনার তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদহ ইউনিয়নের হিন্দু কুশলা গ্রামের আবদুল গাফফার মোল্লার স্ত্রী। তিনি গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে আবুল কাশেমের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন।
আবদুল গাফফার মোল্লা জানান, ২০১৩ সালের দিকে জীবিকার তাগিদে তারা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় চলে আসেন। স্থানীয় আবুল কাশেমের বাড়িতে ভাড়া থেকে একটি মেস পরিচালনা করতেন মাবিয়া। বার্ধক্যজনিত কারণে অন্য কোনো কাজ করতে না পারায় স্ত্রী মাবিয়া খাতুনকে সহযোগিতা করতেন তিনি।
মাবিয়ার স্বামী আরও জানান, সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক তাদের মেসে খাবার খেতেন, তবে খাবার খেয়ে দীর্ঘদিন ধরে টাকা না দেয়ায় বিল্লাল নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে কথাকাটাকাটি হয় মাবিয়ার। ওই সময় বিল্লাল টাকা দেবেন না বলে জানান মাবিয়াকে। একই সঙ্গে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনার কিছু সময় পর পারিবারিক কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েন আবদুল গাফফার মোল্লা ও মাবিয়া খাতুন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন সকালে মাবিয়া খাতুন মেসে রান্না করতে যান, তবে শুক্রবার সকালে তার না যাওয়ায় মেসের লোকজন ভোর পাঁচটার দিকে তাকে ডাকতে আসেন। ওই সময় মাবিয়াকে ঘরে দেখতে না পেয়ে আশপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তার স্বামী আব্দুল গাফফার মোল্লা।
খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তাদের বাড়ির কাছে একটি টয়লেটের পেছনে মাবিয়ার মরদেহ দেখতে পান তিনি। গামছা দিয়ে মাবিয়ার মুখ প্যাঁচানো ছিল। তার মাথাসহ গায়ের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
পরবর্তী সময়ে পুলিশে খবর দেয়া হলে বিষয়টিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে মাবিয়ার স্বামী আবদুল গাফফার মোল্লা এ ঘটনার দোষীদের বিচার দাবি করেন।
এদিকে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত বিল্লাল পলাতক। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে।
বিল্লালের সহকর্মী প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘বিল্লাল হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করত। তার বাড়ি বরিশাল। এর বেশি কিছুই জানি না, তবে বিল্লালের স্বভাব-চরিত্র ভালো ছিল না। সে মাদক সেবন করে।’
গজারিয়া থানার ওসি মো. রাজিব খান বলেন, ‘খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বিষয়টি আমাদের কাছে হত্যাকাণ্ড বলে মনে হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানাতে পারব।’