বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিএডিসির বীজ ধান ও গম এখন পাখির খাবার

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ ধান ও গম কৃষকদের না দিয়ে বিক্রি করা হয়েছে পাখির খাবারের দোকানে। রাজশাহীর এক পাখির খাবারের দোকানে মিলেছে বিএডিসির বস্তায় ভরা এসব বীজ গম ও ধান।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ভালো মানের বীজ উৎপাদন ও সংগ্রহ করে তা ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়। ভালো ফসল উৎপাদন করতেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির এই কার্যক্রম।

অবাক করা বিষয় হলো, বিএডিসির বীজ ধান ও গম কৃষকদের না দিয়ে বিক্রি করা হয়েছে পাখির খাবারের দোকানে। রাজশাহীর এক পাখির খাবারের দোকানে মিলছে বিএডিসির বস্তায় ভরা এসব বীজ গম ও ধান। প্রকাশ্যেই এসব বিক্রি করা হচ্ছে।

বিএডিসি বলছে, ডিলারদের অবিক্রীত বীজ তারা যেখানে ইচ্ছা বিক্রি করতে পারে। খেতেও পারে।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, পাখি কিংবা মানুষ কেউই এই বীজ ধান-গম খেতে পারে না। কেননা এগুলোতে রাসায়নিক মিশ্রিত থাকে। এগুলোর দোকানে বিক্রির ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর গ্রেটার রোড মসজিদের বিপরীতে পাখির খাবারের দোকান সেলিম এন্টারপ্রাইজ। এখানে নানা ধরনের পাখির খাবার বিক্রি করা হয়। সেখানে সারি সারি সাজানো আছে বিএডিসির বীজ ধান ও গমের বস্তা। এসব বস্তায় বিএডিসির সিলও মারা রয়েছে। বস্তা কেটে বিক্রি করা হচ্ছে এসব বীজ। প্রতি কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায় আর গম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

দোকানটিতে ঢুকতেই দেখা মিলছে বীজের বস্তা। এসব বস্তা আর বীজ প্রত্যয়নও দেয়া আছে। তাতে লেখা রয়েছে ট্যাগ নম্বর, ধানের জাতের নাম, লট নম্বর, প্রত্যায়ন ইস্যুর তারিখ, বৈধতার মেয়াদ, নেট ওজন। প্রতিটি ১০ কেজি ওজনের বস্তা। এসব বীজ যশোর জোনের।

বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে দিয়ে দেখা যায়, ভ্যানে করে এসব বীজ আসছে। চটের বস্তায় মোড়ানো এসব বীজ সরাসরি দোকানে তোলা হলো। প্রায় ৩০টি বস্তা সেখানে ঢুকানো হলো। দোকানের সামনে রাখা হলো আরও ৮টি বস্তা। কিছুক্ষণ পর সেই বস্তার মুখ খুলে সরাসরি বিক্রি শুরু করলেন দোকানি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম এন্টারপ্রাইজের মালিক সেলিম হোসেন বলেন, ‘আমরা হরিয়ানের এক ডিলারের কাছ থেকে এগুলো এনেছি। এগুলো তারা বিক্রির পর অবশিষ্ট বীজ নিলামে বিক্রি করে দেয়। আমরা দ্বিতীয় হাত থেকে কিনে নিয়েছি।’

রাসায়নিক মিশ্রিত বীজ গম ও ধান সরাসরি পাখির খাবার হিসেবে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বীজে যাতে পোকার আক্রমণ না হয় সেজন্য কিছুটা বিষ দেয়া থাকে। তবে সেগুলো বাইরে। সরাসরি ধানে বা গমে নয়। আর এগুলো খেয়ে যদি ক্ষতি হতো তবে এতে অনেক পাখি মারা যেত। এখন পর্যন্ত তো সেরকম কিছু শুনিনি।’

বিএডিসি যশোর জোনের উপ-সহকারী পরিচালক (বীজ বিপণন) মুসা আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘চলতি ধান ও গমের মৌসুম শেষ। ডিলাররা উত্তোলন করার পরও কিছু বীজ থেকে যায়। সব বীজ তো আর বিক্রি হয় না। তখন তারা কম দামে বিক্রি করতে পারে। এটা তাদের ব্যাপার। এ বিষয়ে একান্ত এখতিয়ার ডিলারদের।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিলাররা কেন বিক্রি করলেন সেটি আমরা বলতে পারব না। আমাদের বীজ বেচার দরকার আমার বীজ তাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। এই বীজগুলো ২৪ মৌসুমের। এসব বীজে আগামী বছর ফসল ফলবে না। আমরা মনে করি এটি বাইরে বিক্রি করা যৌক্তিক না হলেও তা ডিলারদের বিষয়। আমাদের নয়।’

বিএডিসি রাজশাহীর উপ-পরিচালক কেএম গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘এসব বীজে সামনের বছরে আর ফসল হবে না। এই বীজ আর চলে না। আর বীজের চাহিদা নির্ণয় করা হয় মন্ত্রণালয় থেকে। চাহিদা দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এরপর এনএসবি মিটিএয় কে কত বীজ উৎপাদন করবে সেটির অনুমোদন দেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘বীজের যাতে সংকট না হয় সেটি বিএনডিসি দেখভাল করে। কোনো কোনো বছর আবাদ একটু কম হয়। ওই বছর তখন বীজ বেচে যায়। এখন সিজন শেষ। ডিলার যারা এই বীজ নিয়েছেন তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

‘ধরুন, তাদের ৬১ টাকায় কিনে ৬৯ টাকায় বিক্রি করার কথা। সিজনের পর এসব বীজ খাদ্য বা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হবে। একটা সময় আমরা এগুলো ফুডকেও দিয়ে দিতাম।’

তবে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাজদার হোসেন বলেন, ‘এসব বীজ পাখির খাওয়ার উপযোগী নয়। মানুষের খাওয়ারও উপযোগী নয়। অনেক কেমিক্যাল মেশানো হয়। আমরা এর পক্ষে নই। এটা কেন হচ্ছে আপনারা তদন্ত করতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘যেখানে ধান ও গমের বীজের চাহিদা আছে সেখানে দেয়া হয়নি। অথবা যেখানে চাহিদা নেই সেখানে বেশি আনা হয়েছে। এ কারণে এগুলো হয়েছে।’

রাজশাহী গম গবেষণাগারের সাবেক প্রধান বিজ্ঞানী ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমি গত মাসেই যশোরে বদলি হয়ে এসেছি। আমরা অনেক কষ্ট করে এসব বীজ উৎপাদন করি। এরপর বিএডিসিকে দিয়ে দেয়া হয়। এবার ব্যাপক চাহিদা ছিল গমের বীজের। তারপরও কেন এমনটি হলো আমার জানা নেই।’

তিনি বলেন, ‘বিএডিসির কাছে আমরা জানতে চাইব এটি কেন হলো। এটি হওয়ার কথা নয়। বিএডিসির মাধ্যমে বীজ তো কৃষক পাবে। এটি পাখির খাবারের জন্য নয়। পাখির খাবারের জন্য তো আলাদা গম উৎপাদন হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর