বারি-৩৩ ও ডাব্লিউএমআইআর দগম-৩ নামের ব্লাস্ট প্রতিরোধী দুটি গমের জাত আবিষ্কারে ফলে গম চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষিনির্ভর মেহেরপুরের চাষিদের।
চলতি মৌসুমে ফসলটির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে এই দুটি জাতের বাইরে অন্য জাতের গম আবাদ করে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েছে জেলার অনেক চাষি।
চলতি মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক গম চাষ হওয়ায় কৃষি বিভাগ স্বস্তিতে থাকলেও গম খেতে আবারও দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ। ফলে অস্বস্তিতে রয়েছেন জেলার অনেক কৃষক।
জেলার তিন উপজেলা- গাংনী, মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগরের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমিতে থাকা গম এখনও পূর্ণ পরিপক্ব হয়ে কাটার মতো হতে সময় লাগবে কম পক্ষে তিন সপ্তাহ।
জেলার অনেক এলাকার দূর থেকে দেখে মনে হবে, গম পরিপক্ব হয়ে কাটার উপযোগী হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে তা মাইজ থেকে শিষ শুকিয়ে মরে গিয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। এটিই গমের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ। ফসলের আশি শতাংশ পর্যন্ত ফলন বিপর্যয় ঘটাতে পারে এ রোগ।
কৃষি বিভাগ চাষিদের সর্বদা বলেছে, নতুন উদ্ভাবিত গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধী উচ্চ ফলনশীল যে দুটি জাত আবিস্কার হয়েছে, তা চাষ করতে। এমনকি প্রণোদনা হিসেবেও দেয়া হয়েছে সার ও গম বীজ।
ঝোড়াঘাট গ্রামের গমচাষি আকমল হোসেন বলেন, ‘আমাদের মাঠে এবার ব্যাপক গমের আবাদ হয়েছে। আমিও দুই বিঘা জমিতে গম আবাদ করেছি। তবে সপ্তাহখানেক হবে, গম সব হলুদ হয়ে কাটার মত অবস্থা হয়ে গেছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না।’
তার চাষ করা গম ‘প্রদীপ’ জাতের বলে জানান তিনি।
নওদা মটমুড়া গ্রামের চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজের সংগ্রহে থাকা বীজ দিয়ে গমের আবাদ করেছি। গমও খুব ভালো হয়েছিল। মাঠে থাকা গম এখনও কাটার মত হয়নি। তবে এখনই সব গম হলুদ হয়ে গেছে। এই গমে ভালো ফলন পাওয়া যাবে না। এ বছর গমে ধরা খায়ি গেলাম।’
তেরাইল গ্রামের চাষি আজিজুল হক বলেন, ‘ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত বের হয়েছে বলে শুনেছি। তবে আমরা সবসময়ই বাড়িতে সংগ্রহে থাকা বীজ থেকে গমের আবাদ করি। এ বছরও তাই করেছি।’
তিনি বলেন, ‘শুরুতে গম খুব ভালো হয়েছিল। শেষের দিকে এসে সব গম শুকিয়ে হলুদ হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে দশ হাজার টাকার মত খরচা হয়েছিল গম চাষে। সামনের বার আর বাড়ির বীজ দিয়ে গম চাষ করব না।’
মেহেরপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কৃষ্ণ কুমার হালদার বলেন, ‘চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ হাজার হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টর জমি। কৃষি বিভাগ পক্ষ থেকে চাষিদের উদ্দেশে সবসময় বলা হয়েছে, ব্লাস্ট প্রতিরোধী উচ্চফলনশীল জাতের গম চাষ করতে। এমনকি পাঁচ হাজার চাষিকে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। যারা কৃষি বিভাগের কথা না শুনে বাড়িতে সংগ্রহে থাকা গম বীজ ব্যবহার করেছেন, তাদের খেতে ব্লাস্ট আক্রমণ করেছে।’