বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জমে উঠেছে শেষ সময়ের বইমেলা

শেষ সময়ে এসে বইপ্রেমীদের মনে বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করেছে। এই সময়ে ক্রেতাদের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ জমজমাট হয়ে উঠেছে।

মাসব্যাপী চলছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। দেখতে দেখতে এ বছরের মেলা প্রায় শেষের পথে। আর মাত্র দুদিন পরই পর্দা নামবে অমর একুশে বইমেলার।

শেষ সময়ে এসে বইপ্রেমীদের মনে বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করেছে। এই সময়ে ক্রেতাদের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ জমজমাট হয়ে উঠেছে।

রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী অমর একুশে বইমেলার। তবে বইয়ের দোকান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেশি হওয়ায় এই অংশেই দর্শনার্থীদের বেশি ভিড় দেখা যায়।

মঙ্গলবার বিকেলে মেলায় বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। মেলায় ক্রেতারা আসছেন, দেখছেন, বই কিনছেন। তবে অনেক দর্শনার্থীদের মেলা প্রাঙ্গণে আড্ডায় মেতে থাকতে দেখা যায়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই মেলায় বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।

এদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন বয়সের মানুষের হাতেই ছিল বইয়ের ব্যাগ। অন্যান্য দিনের মতো বেশি ভিড় দেখা যায় মেলার শিশু কর্ণার ও স্টলগুলোতে।

বইমেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী ক্রেতাদের ভিড়। তবে ক্রেতার থেকে দর্শনার্থীদের সংখ্যাই মেলায় বেশি। বিক্রিও হচ্ছে দেদারসে।বইমেলা প্রাঙ্গণে এদিন যেন তিল ধারণের জায়গা নেই। সব বয়সের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় মেলা। লোকসমাগমে জমজমাট হয়ে ওঠে বইমেলা। স্টলগুলোতে বিক্রি বাড়ায় খুশি বইয়ের দোকানিরাও।

বাতিঘর, মাওলা ব্রাদার্স, কথা প্রকাশ, ঐতিহ্য, অন্যপ্রকাশ, আগামী প্রকাশনীসহ অধিকাংশ স্টল ও প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল এদিন। ছোট প্রকাশনীগুলোতেও ছিল প্রচুর মানুষের সমাগম।

মঙ্গলবারের মেলায় তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন তরুণ-তরুণীরা। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে, আবার কেউ এসেছেন প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে।

প্রকাশকরা বলছেন, মেলার শেষ সময়ে পছন্দের বই কিনতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত মেলা। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্টলের বিক্রয়কর্মীরা। অন্যদিকে লেখক-পাঠক আড্ডায় বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিণত হয়েছে মিলন মেলায়।

মেলার দর্শনার্থীরা বলছেন, দুই দিন পরে শেষ হয়ে যাবে মেলা। ফলে যারা নানা ব্যস্ততার কারণে এতোদিন মেলায় আসতে পারেননি, তারাও শেষ সময় এসে নিজেদের পছন্দের লেখকের বই কিনছেন।

মেলার বিভিন্ন স্টলের দায়িত্বরতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শেষ সময়ে এসে বেচাবিক্রি বেড়েছে, কমবেশি সবাই বই কিনছেন। তবে ক্রেতারা তাদের বাছাই করা তালিকা ধরেই পছন্দের লেখকের বই ক্রয় করছেন।

তাম্রলিপি প্রকাশনীতে তাশফিকালের লেখা সামিনব্বই দশকের ভালোবাসা বইটি কিনছিলেন ফৌজিয়া আফিয়া। তিনি বলেন, প্রথম বইমেলায় এসেছি। যদিও শেষ সময় তবুও ইচ্ছা আছে বেশ কয়েকটা বই কেনার।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোট গল্পের বই বিক্রি করা হচ্ছে ভাষাপ্রকাশ প্রকাশনীতে। বইটি কিনছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রাহি বুশরা। তিনি বলেন, ছোট ভাইকে উপহার দেবার জন্যই বইটি কিনলাম।

অনন্যা প্রকাশনের সর্বাধিক বিক্রিত বই হুমায়ুন আহমেদের হিমু সমগ্র। স্মিতা দেবনাথ নামে এক চাকরিজীবী কেনেন বইটি। তিনি বলেন, হুমায়ুন আহমেদ স্যার চির যৌবনা। স্যারের বই সংগ্রহে রাখার জন্যই কেনা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় এসেছেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের হোসেন শান্ত। তিনি বলেন, এবার মেলায় এর আগে দুই দিন এসেছি। তবে খুব বেশি বই কেনা হয়নি। আমরা এবার সব বন্ধুরা একসঙ্গে মেলায় এসেছি। সবাই-সবাইকে একটি করে বই উপহার দিয়েছি। এছাড়া সবাই নিজেদের পছন্দের বইগুলোও কিনেছি।

ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম এবছর প্রথমবারের মতো মেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, দিনের বেশিভাগ সময় টিউশনি করে সময় পার হয়ে যায়। ফলে এবারের মেলায় আসা হয়নি। এজন্য সকালে একটি টিউশনি করার পর বাকি দুইটি থেকে ছুটি নিয়ে মেলায় এসেছি।মাওলা ব্রাদার্সের বিক্রয়কর্মী রুহুল সরকার বলেন, মেলা প্রায় শেষের দিকে। বেশ কয়েক দিন ধরে মেলায় মানুষের উপস্থিতি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এ কারণে আমাদের বিক্রিও বেড়েছে।

অন্যপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী আশিক মাহমুদ বলেন, আমাদের প্রকাশনী থেকে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ বই ছাপানো হয়। এজন্য আমাদের স্টলে হুমায়ূনপ্রেমীদের ভীড় সবসময় একটু বেশিই থাকে, বিক্রিও হয় অনেক।

পাঞ্জেরী প্রকাশনীর বিক্রেতা অনামিকা শিকদার জানান, আমাদের এখানে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ বই বিক্রি হচ্ছে। আগে যেখানে পঞ্চাশ হাজার টাকার বই বিক্রি হতো, সেখানে এখন লাখ ছুঁই ছুঁই অবস্থা। বিক্রি বেশ ভালো চলছে।

অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ বলেন, শেষ সময়ে ক্রেতা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। সবসময় এমনটাই হয়ে আসছে। বিক্রি নিয়ে আমাদের সন্তুষ্টির কিছু নেই। কেননা বইয়ের বিক্রি সংখ্যা কিন্তু তেমন নয়। আমরা যতটা আশা করছি বা সবাই যা ভাবছে বাস্তবে তা হচ্ছে না।

শব্দশৈলীর প্রকাশক ইফতেখার আমীন বলেন, সারা বছর যে বই আমরা বিক্রি করি তার একটা বড় অংশই মেলায় বিক্রি হয়। আর সেই বিক্রিটাই হয় মেলার শেষ সময়ে। স্বভাবতই আমরা খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। তবে আমরা এতোটাও সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আশা করছি শেষ দুই দিন বেচাকেনা ভালো হবে।

অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিন মঙ্গলবার মেলা শুরু হয় বিকেল তিনটায় এবং চলে রাত নয়টা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ৯৫টি। বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: সেলিম আল দীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লুৎফর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রশীদ হারুন এবং জাহিদ রিপন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।

প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলা নাটকের ইতিহাসে সেলিম আল দীনের অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অস্থির পরিস্থিতিতে প্রকৃত বাস্তবকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে উপস্থাপন করাকেই তার কর্তব্য বলে মনে করেছেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক চিত্র তার নাটকে মূর্তরূপ লাভ করেছে। নাটক রচনাকালে তার চেতনার ভূগোল তৈরি হয়েছে সমগ্র প্রকৃতি, মানুষ, জনপদ, জীবন এবং গ্রামীণ ও নাগরিক সমাজের বিদ্যমান দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে।

আলোচকরা বলেন, সচেতন নাট্যকার হিসেবে সেলিম আল দীন সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করতে পারেননি। তার নাটকের ভেতর সমকালীন বাস্তবতার চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। সমাজ-চেতনা এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেলিম আল দীনের নাটকেও বিবর্তন এসেছে। তিনি এ অঞ্চলের শিল্পরীতি ও শিল্পদর্শনকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে চালিত করেছেন এবং বাঙালির নাট্য- সংস্কৃতি ও নাট্যযাত্রার পথকে সুগম করার জন্যে আজীবন কাজ করে গেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, সেলিম আল দীন রাজনীতি ও মানুষকে একীভূত করে তার নাট্যভূমি নির্মাণ করেছেন। কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতবাদের পক্ষাবলম্বন না করে শিল্পীর নির্মোহ অবস্থান থেকে তিনি নাট্যচর্চা করেছেন।

বইমেলায় হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ

বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে এদিন বিকেল পাঁচটার দিকে হুমায়ুন আজাদ দিবস পালন উপলক্ষে লেখক-পাঠক ফোরামের উদ্যোগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার তথ্যকেন্দ্রের সামনে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

বিশিষ্ট প্রকাশক ওসমান গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বক্তৃতা প্রদান করেন কবি মোহন রায়হান, কবি আসলাম সানী, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

এ বিভাগের আরো খবর