বিদেশি কূটনীতিকরা যাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারেন সেজন্য ‘অ্যাম্বাসেডরস আউটরিচ প্রোগ্রাম’ আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, রাজধানীর বাইরে পরিদর্শনের মাধ্যমে কূটনীতিকরা বাঙালি জাতির সামর্থ্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে সেই খবরগুলো তাদের দেশে পৌঁছাবেন। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির খবর বিশ্বময় ছড়িয়ে যাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত দুদিনব্যাপী ‘অ্যাম্বাসেডরস আউটরিচ প্রোগ্রাম’-এর আওতায় প্রথম দিন মঙ্গলবার দুপুরে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার মিশন প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামে ন্যাভাল একাডেমি ও কর্ণফুলী টানেল পরিদর্শন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে ট্রেনযোগে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রার প্রাক্কালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. নজরুল ইসলাম ও পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, কোরিয়া, ইতালি, ডেনমার্ক, কসোভো, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, ভ্যাটিকান, ভুটান, স্পেন, আর্জেন্টিনা, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মিসর, ফ্রান্স এবং এফএও, আইইউটি, একেডিএন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ২৪ জন মিশন প্রধানসহ ৩৪ জন কূটনৈতিক সদস্য এই আউটরিচ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যেন আমাদের দেশকে আরও জানেন, দেশে যে বিরাট উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ হচ্ছে সেগুলো যেন তারা স্বচক্ষে দেখেন, সে উদ্দেশ্যেই তাদেরকে চট্টগ্রামে আনা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনযোগে তারা কক্সবাজারে যাবেন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি প্রতিনিধিরা ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সফরে এসেছেন। তারা চট্টগ্রামে কয়েক ঘণ্টা কাটালেন এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম রোড টানেল দেখলেন। এই সফরের মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন।
‘ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার কোথাও নদীর তলদেশ দিয়ে রোড টানেল নেই। এই যে অসাধারণ উন্নয়ন, যেগুলো আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে মানুষ কল্পনাও করেনি, সেগুলো আজ বাস্তব। সেই বাস্তবতা আজ কূটনীতিকরা নিজের চোখে দেখেছেন।’
কূটনীতিকদের ট্রেনযোগে কক্সবাজারের নেয়া প্রসঙ্গে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন হয়েছিল ১৯৩০ সালে। তারও আগে ব্রিটিশ আমলে ১৯০০ সালের পরপরই চট্টগ্রাম থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তিনি বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কারণ তাকে সাড়ে তিন বছরের মাথায় হত্যা করা হয়।’
মন্ত্রী হাছান বলেন, ‘এই জনপদের মানুষ ১২৫ বছর আগে যে স্বপ্ন দেখেছিল, বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এই অসাধারণ কাজ দেখানোর জন্য কূটনীতিকদেরকে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে করে কক্সবাজার নিয়ে যাচ্ছি।
‘তাদেরকে এখানে আনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা যেন বাংলাদেশকে জানেন এবং চেনেন। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যে আমাদের দেশে, এই খবরটা যেন তাদের মাধ্যমে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের সৌন্দর্য ও উন্নয়ন সম্পর্কে তারা যেন ভালো করে জানতে পারেন, সেজন্যই তাদেরকে আমরা নিয়ে এসেছি।’
বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথাবার্তা হবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. হাছান বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা তো আমাদের সবসময়ই হয়। তারা অনেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন। এবারও সুযোগ পেলে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবেন।’