আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদারকে চেয়ারম্যান করে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়েছে।
আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত মঙ্গলবারের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ট্রাইব্যুনাল থেকে হাইকোর্ট বিভাগে প্রত্যাবর্তন করেছেন। আর তার শূন্য পদে পিআরএলে থাকা জেলা ও দায়রা জজ এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়াকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অপর সদস্য বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমকে তার পদে বহাল রাখা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ট্রাইব্যুনাল হতে হাইকোর্ট বিভাগে প্রত্যাবর্তন করার বিষয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি অভিপ্রায় ব্যক্ত করায় The International Crimes (Tribunals) Act, 1973 (Act No. XIX of 1973) এর Section 6 (4)- এর বিধান মোতাবেক ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণাক্রমে ট্রাইব্যুনালের বর্তমান সদস্য মাননীয় বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদারকে চেয়ারম্যান এবং তার শূন্য পদে জনাব এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, জেলা ও দায়রা জজ (পিআরএল ভোগরত)-কে তার পিআরএল বাতিলক্রমে ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলো।
‘ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য মাননীয় বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমকে তার পদে বহাল রাখা হলো।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মাননীয় বিচারপতি জনাব মো. শাহিনুর ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগে প্রত্যাবর্তন করবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কর্মরত থাকাকালে তাকে প্রদত্ত সকল নিরাপত্তা সুবিধাসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধাদি বিধি মোতাবেক অব্যাহত থাকবে এবং উক্ত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত একজন বিচারপতির সমমর্যাদার বেতন-ভাতাদি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাদি প্রাপ্ত হবেন।’
এর আগে বিচারপতি আনোয়ারুল হকের মৃত্যুর পর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদ খালি হওয়ায় ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর বিচারপতি শাহিনুর ইসলামকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে সদস্য করে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার।
মামলা সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দু্ই বছর পর দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ২০১২ সালের ২৩ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই বিচারক হন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) এবং ট্রাইব্যুনালের নিবন্ধক মো. শাহীনুর ইসলাম।
২০১২ সালের আগস্ট মাসে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিচারক জহির আহমেদ প্রথমে পদত্যাগ করেন। তখন হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনকে ট্রাইব্যুনাল-১-এর সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।
এরপরই স্কাইপ বিতর্কের মুখে বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করেন। তখন বিচারপতি ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়। তিনি অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে (বর্তমানে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি) ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ পান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি)। তার সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম।
আলোচিত মামলাগুলোর রায় ঘোষণার পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দুই ট্রাইব্যুনালকে ভেঙে দিয়ে একটি ট্রাইব্যুনাল ঘোষণা করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দুটি ট্রাইব্যুনাল থেকে ৫৫টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।