বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ক্যাটালগ দেখে ‘পছন্দের’ বই সংগ্রহে বইপ্রেমীরা

  •    
  • ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২৩:৩৫

মেলা একদম শেষপর্যায়ে চলে আসায় এরই মধ্যে প্রায় সব নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। ফলে প্রকাশনীর ক্যাটালগ বা তালিকা দেখে নিজেদের পছন্দের সব পাঠকের বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নে বই কিনতে দেখা যাচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী আজকের দিনের পর আর মাত্র তিন দিন আছে প্রাণের মেলার সময়। তিন দিন পরই শেষ হয়ে যাবে মাসব্যাপী চলা বইয়ের এ উৎসব। তবে আগামী ১ ও ২ মার্চ শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুই দিন বইয়ের মেলা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন প্রকাশকরা। এ জন্য বাংলা একাডেমিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ-কালের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। তবে সেই দুই দিন সময় না বাড়ানো হলে আপাতত দৃষ্টিতে বইমেলা ২৯ ফেব্রুয়ারিই শেষ হচ্ছে।

তাই মেলা একদম শেষপর্যায়ে চলে আসায় এরই মধ্যে প্রায় সব নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। ফলে প্রকাশনীর ক্যাটালগ বা তালিকা দেখে নিজেদের পছন্দের সব পাঠকের বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নে বই কিনতে দেখা যাচ্ছে।

বরাবরের মতো এবারও শেষ দিকে বেড়েছে বই বিক্রি। কারণ হিসেবে প্রকাশকরা বলছেন, সাহিত্যপ্রেমীরা মেলার শুরু থেকে বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে তালিকা সংগ্রহ করে শেষ দিকে এসে বই কেনা শুরু করেন। এরই মধ্যে মেলা থেকে তাদের ব্যাগ ভর্তি করে বই কিনতে দেখা গেছে।

বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, মেলায় এখন যারা আসছেন তাদের বেশির ভাগই বইয়ের ক্রেতা। পাঠকদের বড় একটি অংশ মেলায় বই কিনছেন নিজের পছন্দ করা বইয়ের তালিকা ধরে ধরে। মেলায় প্রকাশনী স্টলগুলোতে কিছুক্ষণ পরপরই পাঠক আসছেন। যাদের মধ্যে অনেকেই তালিকা ধরে বই কিনতে আসছেন মেলায়। এক প্রকাশনী থেকে বই সংগ্রহ শেষে ছুটছেন অন্য প্রকাশনীতে। তাদের অনেকেই পছন্দের তালিকার বই কিনতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকেই দেখেশুনে বই কিনতে দেখা গেছে।

মেলায় আগত পাঠক-দর্শনার্থী জানান, বিভিন্ন প্রকাশনী ঘুরে ক্যাটালগ দেখে এতদিন নতুন বইয়ের তালিকা সংগ্রহ করেছেন তারা। মেলা শেষপর্যায়ে আসায় এরই মধ্যে প্রায় সব নতুন বই চলে এসেছে। ফলে এখন আর শুধু দেখা নয়, এবার তারা পছন্দের বইগুলো কেনা শুরু করেছেন তারা।

আগামী, অন্যপ্রকাশ, সময়, প্রথমা, পাঞ্জেরী, অন্বেষা, ইত্যাদি, বাতিঘর, অনন্যা, কাকলী, উৎস, দিব্য, বিদ্যা, পুথিনিলয়, অ্যাডর্ন, পার্ল, ইউসিবিএল, কথাপ্রকাশ, শোভাসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রকাশনার প্যাভিলিয়ন ও স্টল ঘুরেও দেখা গেছে বইয়ের বিক্রির হিড়িক। সেখানেও দেখা গেছে তালিকা ধরে ধরে পাঠ করা বই কিনছেন।

আজ বইমেলায় ছিল ছুটির দিন। পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে সরকারি এ ছুটির দিনে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত মেলায় যেন জনস্রোত তৈরি হয়েছিল। পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড়ে বইয়ের বেচাকেনাও হয়েছে বেশ। এতে একদিকে প্রকাশকদের মুখে যেমন হাসি ফুটেছে তেমনি পাঠকদের কাছে নিজের বইটি তুলে দিতে পেরে সন্তুষ্ট লেখকরাও।

রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে বইমেলায় ঘুরতে আসা আদিবা জাহান নওমি বলেন, ‘এবারের বইমেলায় শুরুর দিকে একবার এসে ঘুরে গেছি। তখন প্রকাশনীগুলো থেকে তাদের ক্যাটালগ সংগ্রহ করেছিলাম। বাসা থেকে এবার পছন্দ করা বইগুলোর তালিকা করে নিয়ে এসেছি। এখন ক্যাটালগ থেকে তালিকা ধরে ধরে বই কিনেছি। বেশ কিছু বই কেনা বাকি রয়েছে। শেষ দিন হয়ত আবার আসা হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা নূর ঐশী বলেন, বইমেলা তো হলের পাশেই যখন ইচ্ছে হয় যাওয়া যায়। তবে মেলার শুরুর দিকে দুয়েকটি বই কিনছিলাম। আর এখন পছন্দের তালিকা থেকে বই কিনতে এসেছি। মেলা থেকে নিজের পছন্দের অন্তত ১০টি বই কিনবেন বলেও জানান তিনি।

বইমেলা থেকে বড় মেয়ের জন্য হুমায়ূন আহমেদের কোথাও কেউ নেই বইটি কিনেছেন ঢাকা জজ কোর্টের সাংবাদিক হীরক পাশা। তিনি জানান, নিজের পছন্দের বিষয় ইতিহাস ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের বেশ কিছু বই কিনেছেন তিনি। স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা, ছেলে আবরার ও ছোট মেয়ে আরিফা কিনেছে যথাক্রমে ধর্মীয় বই, নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প ও ছোটদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, মেলার শেষ দিকে প্রচুর পাঠক এখন তালিকা ধরে ধরে বই কিনছেন। এ ধরনের পাঠক-ক্রেতাই এখন বেশি। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় বই ক্রয়ের দিক থেকে পাঠকদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছে।

বেচাকেনার হালচাল নিয়ে মৃদুল প্রকাশনীর প্রকাশক এম সহিদুল ইসলাম বলেন, এখন মেলার অন্তিম সময় চলছে। বলা চলে বই বিক্রির মোক্ষম সময় এখনই। আমরা পাঠকদের চাহিদা অনুযায়ী বই বিক্রি করছি। পরিবারের সবাই এমনকি বইপ্রেমীরা বুক লিস্ট ধরে ধরে এখন বই কিনছেন।

বইয়ের চাকচিক্য ও অধিক মূল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাগজের মূল্য তো অত্যধিক। তা ছাড়া কাগজের ওপর শুল্কও কমানো হচ্ছে না। বই লেখা, ছাপানো, মুদ্রণ খরচ কিন্তু কম নয়। আর চাকচিক্যের যে বিষয়টি বলছেন সেটি আসলে বই বিক্রির একটি পন্থাও বটে। কাগজ মানসম্মত না হলে অনেক পাঠক বই কিনতেও চায় না।

বইমেলার ২৬তম দিন সোমবার মেলা শুরু হয় দুপুর ১২টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এই দিনে নতুন বই এসেছে ২৪৬টি। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মেলায় এদিন মানুষের ঢল নামে। এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: আবুবকর সিদ্দিক এবং স্মরণ: আজিজুর রহমান আজিজ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে ফরিদ আহমদ দুলাল ও কামরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মামুন মুস্তাফা, তৌহিদুল ইসলাম, মো. মনজুরুর রহমান ও আনিস মুহাম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ মান্নান।

‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক সরকার আবদুল মান্নান, কবি ইউসুফ রেজা, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক দিলওয়ার হাসান এবং কথাসাহিত্যিক মোস্তফা তারিকুল আহসান।

বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চে বিকেল ৫টায় সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা বিষয়ে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন সঞ্জীব পুরোহিত, তারেক রেজা, জাহিদ সোহাগ, আফরোজা সোমা, আহমেদ শিপলু, রাদ আহমদ এবং সৈয়দ জাহিদ হাসান। সঞ্চালনা করেন ফারহান ইশরাক ও খালিদ মারুফ।

এ ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ, শামীম রেজা, রহিম শাহ, নভেরা হোসেন এবং ইমরান পরশ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ম ম জুয়েল, আরিফ হাসান, আলম আরা জুঁই, খোদেজা বেগম। এ ছাড়া ছিল জয়দুল হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সাহিত্য একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া’, মুশতাক আহমেদ লিটনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আমরা কুঁড়ি’ এবং শাহিনুর আল-আমীনের পরিচালনায় সংগঠন ‘সম্প্রীতি সংস্কৃতি বন্ধন’-এর পরিবেশনা।

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪

২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য কথা প্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে মনজুর আহমদ রচিত একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত যাত্রাতিহাস: বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত কিলো ফ্লাইট প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খিকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়েছে। ২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্যপ্রকাশ (প্যাভিলিয়ন), নিমফিয়া পাবলিকেশন (২-৪ ইউনিট), বেঙ্গল বুকস (১ ইউনিট)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়েছে। ২৯ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কারগুলো হস্তান্তর করা হবে।

আগামীকালকের বইমেলা

বইমেলার ২৭তম দিন মঙ্গলবার মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: সেলিম আল দীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন লুৎফর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন রশীদ হারুন ও জাহিদ রিপন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।

এ বিভাগের আরো খবর