রোহিঙ্গা ও অপরাধীদের জন্য ভুয়া জন্মসনদ, এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরির অভিযোগে প্রতারক চক্রের ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ এবং দালাল ছাড়াও দুজন আনসার সদস্য রয়েছেন। এই প্রতারক চক্র গত তিন মাসেই রোহিঙ্গাদের জন্য ১৪৩টি পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- রাজধানীর আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অভিযান চালিয়ে তিন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাগজপত্র, পাসপোর্ট ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা, টাঙ্গাইল ও কক্সবাজারে অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে দুই আনসার সদস্য ছাড়াও রোহিঙ্গা ও বাঙালি মিলিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩টি এনআইডি, ৫টি কম্পিউটার, ৩টি প্রিন্টার, ২৪টি মোবাইল ফোন সেট ও পাসপোর্ট তৈরির কাগজপত্র।
গ্রেপ্তারকৃত রোহিঙ্গারা হলেন-উম্মে ছলিমা ওরফে ছমিরা, মরিজান, রশিদুল, আইয়ুব আলী ও মোস্তাকিম।
এছাড়া আনসার সদস্য জামসেদুল ইসলাম ও রায়হানসহ চক্রের অন্য সদস্যদের ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, চক্রটি রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদের লাখ টাকার বিনিময়ে ভুয়া জন্মসনদ, এনআইডি ও পাসপোর্ট বানিয়ে দিত।
প্রতারক চক্র এই অপকর্ম চালাতে সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গাদের প্রথমে কক্সবাজার, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকায় আনতো। একটি দল তাদের জন্মসনদ ও এনআইডি বানিয়ে দিত। আরেকটি দল ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দিত।
ডিবি পুলিশ জানায়, চক্রটি ৬ ঘণ্টার মধ্যে জন্ম সনদের জন্য ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা, তিনদিনের মধ্যে এনআইডি করার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট তৈরির জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিতো বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
২০১৯ সাল থেকে চক্রটি রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অপরাধীদের ভিন্ন নাম ও ঠিকানায় পাসপোর্ট করে দিয়ে আসছিল। এভাবে তারা গত তিন মাসেই রোহিঙ্গাদের জন্য ১৪৩টি পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছে বলে স্বীকার করেছে।