বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেগুনে পোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষক, ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ পাতার পরামর্শ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১২:০০

দুর্ভোগে পড়া কৃষকদের উদ্দেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বার্তা দিয়েছে, কীটনাশক দিলেও কাজ হবে না। ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ পাতলে এ আক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। 

শেরপুরে বেগুনের খেতে পোকার আক্রমণ দেখা দেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। লাভের আশায় ধার করে বিনিয়োগ করেছিলেন তারা, কিন্তু বেগুন খেতে ব্যাপকভাবে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন অধিকাংশ কৃষক।

এমন দুর্ভোগে পড়া কৃষকদের উদ্দেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বার্তা দিয়েছে, কীটনাশক দিলেও কাজ হবে না। ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ পাতলে এ আক্রমণ ঠেকানো সম্ভব।

শেরপুর সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ডাকপাড়ার বেগুনচাষী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘লাভের আশায় এ বছর সাত বিঘা জমিতে গোল বেগুনের আবাদ করেছিলাম। ধার করে ছয় লাখেরও বেশি টাকা খরচ করেছি, কিন্তু বেগুন ক্ষেতে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে বেশির ভাগ বেগুনই নষ্ট হয়ে গেছে। কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো কাজ হয়নি।

‘এতে পোকার আক্রমণে ছিদ্র করা অধিকাংশ বেগুনই ফেলে দিতে হয়েছে। ফলে খেতে বিক্রি হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেগুন। বাকি টাকা উঠবে না। এখন জমিজমা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হবে । তাই চরম হতাশায় দিন কাটছে।’

বেগুন চাষী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এবার বাগুন টালে ধরা, বাগুন ক্ষেতে এবার প্রচুর পোকা। এক মন বাগুন তুললে, এক মনবাগুনেই পোকা থাকে। অনেক বিষ দিলাম, কিন্তু কোনো কাজ হইলো না। বিষ কোম্পানির নোক আইয়া যে বিষ দিবার কইতাছে, ওডেই দিতাছি কিন্তু কোনো কাম অইতাছে না। বাগুন তুইলে গরুরেই খাওয়াইছি বেশি, সাড়ে তিন লাখ টেহার মতো বেচছি। যে বেগুন আছে ঐডি দিয়া আর বাকি টেহা তুলবার পামুনা। এহন ঋণ দিবার গেলে জমি বেচা ছাড়া, আমার কোন বুদ্ধি নাই। সরকারি কৃষি অফিসার আহনের কথা আছিলো, আহেনাই কোনোদিনও।’

কৃষক ওসমান আলী বলেন, ‘গত বছর গোল বেগুন চাষ করে লাভ করেছিলাম। তাই এইবার বেশি কইরা লাগাইছিলাম। কিন্তু এ বছর বেগুনের টাকা পোকার পেটে চলে গেছে। কি! কইরা এহন চলি।’

কৃষকদের অভিযোগ সরকারি কৃষি বিভাগের লোকজন তাদের কাছে আসেন না। তাই তারা বাজার থেকেই কীটনাশক এনে ক্ষেতে স্প্রে করেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে তারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষকরা মহাজনের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। তাই সরকারিভাবে সহায়তা চান ক্ষতিগ্রস্তরা।

বেগুন চাষি সামিদুল হক বলেন, ‘গত বছর মনে করেন, এইখানি টাল দিয়ে খরচপাতি বাদ দিয়া লাখ খানি টেহা লাভ করছিলাম। এবার বছর পোকা জরজরা কইরা ফেলাইছে। এবার চালানই তুলা হাইতাছিনা। দশ হাজার টেহা টাইনা আইনা দিছিলাম, এই টেহাডাও তুলবার পাই নাই।’

বেগুন চাষি হোসেন বলেন, ‘টাল দেয়ার পরে যে পোহা ধরছে, এই পোহা আর ছাড়াবার পাই নাই। যে কারণে বাগুন টালে যে টেহা খরচ করছিলাম, তা আরো লছ, বাগুনের টেহা তুলবার পাই নাই। বাজারে গেলে যে বিষ দিবার কয়, সেটাই দিতাছি কিন্তু কোন কাজ অইতাছে না। এবার ঋণের টেহা গরু বেইছা দেওন লাগবো। বিএসরাও আহে না। কোম্পানির লোক পাঠাই দিছে। ওরা তো আহেনা।’

বেগুন চাষি খায়রুল বলেন, ‘বাগুন টালের আবাদ আর করন যাবে না। পোহাই সব খাইয়া হেলায়। আমরা অনেক টেহা ধরা খাইছি। আমরা সরকারের কাছে জানাইতেছি, আমগোরে কিছু একটা করুক। গুল বেগুনের চাহিদা বেশি। কিন্তু আমরা কুলেবার পাইতাছি না। পোহা সব শেষ কইরা ফালাইছে।’

শেরপুরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, বেগুন চারা বেড়ে ওঠার সঙ্গে পোকা মারার ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ পাতলে এ আক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হতো।

সেক্স ফেরোমন হচ্ছে এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ- যা কোনো প্রজাতির স্ত্রী পোকা কর্তৃক একই প্রজাতির পুরুষ পোকাকে প্রজনন কার্যে আকৃষ্ট করার জন্য প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয়। সেক্স ফেরোমনের গন্ধে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে স্ত্রী পোকার সঙ্গে মিলনের জন্য এসে ফাঁদে পড়ে প্রাণ হারায়।

শফিকুল ইসলাম বলেন, পোকা ছিদ্র করে বেগুনের ভেতর প্রবেশ করলে কীটনাশক দিলেও তখন তেমন কাজ হয় না। চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ করা হয়েছে। এখানে উৎপাদিত বেগুন জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিভাগের আরো খবর