বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পৌনে ২০০ বছরের স্কুলের ভবন ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী সপ্তাহে জায়গাটি পরিদর্শন করব। প্রধান শিক্ষককে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্কুলের অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোও আমরা তদন্ত করে দেখব।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অধীনস্থ একটি স্কুলের প্রায় পৌনে দুই শ বছরের পুরোনো ভবনের একটি অংশ ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।

জবির পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে দীর্ঘসময় ধরে এ বহুতল ভবন নির্মাণকাজ চললেও বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

১৮৪৮ সালে নির্মিত পুরোনো ঐতিহাসিক ভবনটি ভাঙায় এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উত্তর-পশ্চিম পাশে অবস্থিত ঐতিহাসিক ভবনটি প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। পুরোনো ভবনটির পশ্চিম পাশের একটি অংশের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে।

জবি কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনটি। এতে একদিকে যেমন বেদখল গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি অন্যদিকে ঝুঁকিতে পড়েছে ঐতিহাসিক এই ভবনটিও। একটি অংশ ভেঙে ফেলায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্কুল সংশ্লিষ্টরা জানান, বহুতল ভবনটি নির্মাণ করেছেন দুলাল নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পোগোজ স্কুলের জায়গা দখল করলেও তা নিজের জমি বলে দাবি করেছেন তিনি। এই কাজে তাকে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আরও অভিযোগ উঠেছে, ভবনটি নির্মাণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নির্দেশনা মানা হয়নি। নেয়া হয়নি রাজউকের অনুমতিও। মানা হয়নি ভবন নির্মাণের নিয়মকানুনও। ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী। পুরোনো দেয়ালের ওপরেই ইটের গাঁথুনি তোলা হয়েছে দ্বিতল এই ভবনের দেয়াল। দ্রুত সময়ে তুলে ফেলা হয়েছে বহুতল ভবন। কাজ হয়েছে রাতের অন্ধকারে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ভবন নির্মাণের কাজ চললেও এ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবগত করেনি পোগোজ স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষও।

অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুলটির একটি চক্র মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে দখলদারদের এই বহুতল ভবন নির্মাণে সহযোগিতা করেছে।

বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘এতদিন ধরে ভবন নির্মাণের কাজ চলেছে। অথচ স্কুলের কেউ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। শুরুর দিকে জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যেত। এখানে বড় আকারের আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জড়িত থাকতে পারে। কারা কারা জড়িত তা দ্রুত তদন্ত করে বের করতে হবে।’

এদিকে পুরোনো ভবনটির একটি অংশ ভেঙে ফেলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা শারমিন বৃষ্টি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে দখলদাররা বহুতল ভবন নির্মাণ করে ফেলছে। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা জানে না। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনে নামবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমরা শিক্ষকরা দুলাল নামের ওই ব্যক্তিকে বারবার বলার পরেও তিনি আমাদের কথা শোনেননি। দাবি করেছেন এটা তার নিজের জমি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করবে।’

দীর্ঘদিন ধরে কাজ চললেও এতদিন কেন জানানো হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের ভুল হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্রুত না জানানো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী সপ্তাহে জায়গাটি পরিদর্শন করব। প্রধান শিক্ষককে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্কুলের অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোও আমরা তদন্ত করে দেখব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ূন কবীর চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমি শোনার পর স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কেন তারা আমাদের আগে জানায়নি সেটিও জানতে চেয়েছি। এখন এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শতবর্ষী পুরোনো একটি ঐতিহাসিক ভবন তারা ভেঙেছে এর জন্যও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর