চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। ইতোমধ্যে কমিটির গঠন প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছে। মিলেছে অভাবনীয় সাড়া।
শীর্ষ এ দুটি পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন অন্তত এক হাজার ৪০০ জন। তারা নানাভাবে চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি নগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে জীবনবৃত্তান্ত গ্রহণ করা শুরু করে তারা। ১৬ ফেব্রুয়ারি জীবনবৃত্তান্ত জমা দেয়ার শেষ দিন থাকলেও পরে সময় বাড়িয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়।
জানা গেছে, প্রায় দুই দশক ধরে মহানগর ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ এমইএস এবং সিটি কলেজ-কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। এবারও নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে এ দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের আধিক্যই লক্ষণীয়। তবে নতুন কমিটির শীর্ষ দুটি পদের অন্তত একটি এবার এই দুই কলেজের বাইরে যেতে পারে বলে বলছেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার ১৪০০ জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়লেও আলোচনায় আছেন মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন। এদের মধ্যে থেকেই শীর্ষ পদে আসতে পারেন। তাদের বেশিরভাগই নগরের এমইএস, সিটি ও ইসলামিয়া কলেজ-কেন্দ্রিক ছাত্রলীগ নেতা।
তবে এবার তিন কলেজকে ডিঙিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে চট্টগ্রাম কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ। ১৯৮২ সাল থেকে সাড়ে তিন দশক ধরে ছাত্রশিবিরের দখলে ছিল চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর কলেজের রাজনীতি শিবিরের দখলমুক্ত করে নগর ছাত্রলীগ। এরপর থেকে ছাত্রলীগের কার্যক্রম শক্তভাবে চলে আসছে। এ কারণে এ দুই কলেজকে প্রাধান্য দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নগর ছাত্রলীগের কমিটির জন্য পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা মূলত দুটি বলয়ে বিভক্ত। তাদের একটি পক্ষ হচ্ছে প্রয়াত সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। এই পক্ষ বর্তমানে মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী বলে নিজেদের পরিচয় দেন। অপর পক্ষটি হলো নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলয়ের।
ছাত্রলীগের নতুন কমিটির পদ ভাগিয়ে নিতে নওফেল ও নাছির অনুসারীদের মধ্যে স্নায়ু লড়াই চলছে। নগর যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির শীর্ষ পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন নওফেল অনুসারীরা। ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদেও কি নওফেল অনুসারীরা প্রাধান্য পাবে- তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং নগর কমিটির সভাপতি পদপ্রত্যাশী মাহমুদুল করিম বলেন, ‘আমি সিভি জমা দিয়েছি। চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ শিবিরমুক্ত করতে আমরা কী করেছি, সেটা সবাই জানেন। আমার প্রত্যাশা, ত্যাগী ও কর্মঠ কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে।’
নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, ‘নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের জানিয়েছি। সবকিছু যাচাইবাছাই করেই দ্রুত কমিটি ঘোষণা করবেন বলে আশা করি।’
নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নূরুন নবী সাহেদ, ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হায়দার, কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগের সভাপতি অনিন্দ্য দেব, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার পলাশ, মহসিন কলেজের মায়মুন উদ্দীন, ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের জাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ হানিফ, সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের আশীষ সরকার, মুহাম্মদ তাসিন, ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের মীর মুহাম্মদ ইমতিয়াজ, শাহাদাত হোসেন হীরা, ইমন হোসেন, আজিজুর রহমান, মিজানুর রহমান, নগর ছাত্রলীগের উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রাশেদ চৌধুরী, উপ-ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক এস এম হুমায়ন কবির আজাদ, নগর ছাত্রলীগ নেতা ফাহাদ আনিস ও খালেকুজ্জামান, কলেজ ছাত্রলীগ নেতা বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এম এ আহাদ চৌধুরী রায়হান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে স্থান পেতে এক হাজার চারশ’র মতো বায়োডাটা জমা পড়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা যাচাইবাছাই করে করে এ বিষয়ে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।
২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন নুরুল আজিম রনি। সেসময় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকে।