বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পূর্ব রেলওয়ের কোটি টাকা আত্মসাৎ, কিনারা হয়নি ২৩ দিনেও

  •    
  • ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২১:২০

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক বলছেন, ‘মালামাল সরবরাহ বাবদ প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য টাকা গত ২৮ ডিসেম্বর চারটি চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে ভুয়া বিল-ভাউচারে পাঁচ নম্বর চেকটি আমাদের কেউ গ্রহণ করেননি। ওই চেকের টাকা রেলওেয়ের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে আত্মসাৎ করা হয়েছে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ভুয়া বিল-ভাউচারে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার কোনো কিনারা হয়নি দীর্ঘ ২৩ দিনেও। চিহ্নিত হয়নি টাকা আত্মসাৎকারীরা। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি রিপোর্টও দেয়নি। কোনো মামলাও হয়নি।

তদন্ত কমিটির প্রধান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জয়শ্রী মজুমদার রশ্মি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আমি কোনো কিছু বলতে পারব না। তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে।’

একই বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাবরক্ষক ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল আসিফ বলেন, ‘তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করতে আরও সময় লাগবে।’

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তর পাহাড়তলী থেকে পণ্য কেনার জন্য কোনো ধরনের টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। কেনা হয়নি কোনো পণ্যও। কিন্তু পণ্য কেনাকাটা হয়েছে বলে ভুয়া বিল-ভাউচার দাখিল করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য কসমোপলিটন করপোরেশন’-এর নামে ৩১ জানুয়ারি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে ৮৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেয়।

এদিকে টেন্ডার ছাড়া ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি জানাজানির পর পূর্বাঞ্চল রেলে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় ১১ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব ও অডিট শাখার ৭ কর্মকর্তা–কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়।

বরখাস্ত হওয়া সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন- রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাবরক্ষক মামুন হোসেন, মো. আবু নাছের, শিমুল বেগম, সৈয়দ সাইফুর রহমান, অডিটর পবন কুমার পালিত, জুনিয়র অডিটর ইকবাল মো. রেজাউল করিম ও অফিস সহায়ক মাকসুদুর রহমান।

পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে ৮ ফেব্রুয়ারি চার সদস্যের কমিটি গঠন করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জয়শ্রী মজুমদার রশ্মিকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। এছাড়া হিসাবরক্ষক আব্দুল্লাহ আল আসিফকে সদস্যসচিব, সুগ্রীব চাকমা ও মো. জহিরুল ইসলামকে সদস্য করা হয়।

কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। একইসঙ্গে কমিটিকে বলা হয়েছিল, কসমোপলিটন করপোরেশনকে পরিশোধ করা বিলটি জরুরিভিত্তিতে তদন্ত করা প্রয়োজন। কীভাবে বিলটি পাস ও পরিশোধ করা হলো যাচাই-বাছাই করে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে বিষয়ে সুপারিশ করতে হবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. সাইদুর রহমান সরকার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। রিপোর্ট পেলে সব পরিষ্কার হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, গেল অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স দ্য কসমোপলিটন করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে রেলের বেশকিছু সরঞ্জাম কেনা হয়। এর মধ্যে চারটি কাজের বিল তিন কোটি ৬২ লাখ টাকা কসমোপলিটনকে পরিশোধের জন্য হিসাব বিভাগকে চিঠি দেন প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ উদ্দীন। সে টাকা তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তবে সমস্যা সৃষ্টি হয় এই টাকার বাইরে আরও ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে তুলে নেয়ায়। রেলওয়েকে কোনো পণ্য না দিয়েই এত টাকা নিয়ে যাওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

গত ৩১ জানুয়ারি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হলেও ৮ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি জানতে পেরেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার দপ্তর (এফএঅ্যান্ডসিএও)। এ কাজে রেলের হিসাব বিভাগ থেকে শুরু করে ব্যাংকের কর্মীরাও জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

অপরদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কসমোপলিটন করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী নাবিল আহসান টাকা উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘মালামাল সরবরাহ বাবদ প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য টাকা গত ২৮ ডিসেম্বর চারটি চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে ভুয়া বিল-ভাউচারে পাঁচ নম্বর চেকটি অর্থাৎ ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা তুলে নেয়া হয়। এই চেক কসমোপলিটন করপোরেশনের পক্ষে কেউ গ্রহণ করেননি। ওই চেকের টাকা রেলওেয়ের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এখানে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর