বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বইমেলায় বৃষ্টির হানা

মেলার প্রথম দিন থেকেই লেখকবৃন্দ বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হওয়া তাদের বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করে চলছেন। বৃহস্পতিবার ২২তম দিন পর্যন্ত মেলায় নতুন বই এসেছে ২ হাজার ৪০৭টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে কবিতা, উপন্যাস আর গল্পের বই।

বসন্তের শুরুতেই রাজধানীতে হয়েছে ঝুম বৃষ্টি। এর প্রভাব পড়েছে বইমেলায়ও। অবশ্য বৃষ্টি বেশিক্ষণ স্থায়ী না হওয়ায় তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি প্রকাশক এবং পাঠকদের।

অল্প সময়ের বৃষ্টিতে মেলায় বেশ কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলেও বইয়ের উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয়নি।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি কায়সার হোসেন মামুন বলেন, ‘বৃষ্টি হয়েছে একবার, কিন্তু আমাদের বই গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে দুইবার। মেঘ এমনভাবে জমেছে যেন মনে হচ্ছে তখনই বৃষ্টি চলে আসবে। এই মেঘ দেখে একবার, আরেকবার বৃষ্টি শুরু হলে বই গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে। তবে বইগুলোর কভার ভালো হওয়াতে বৃষ্টির কারণে কোনো বইয়ের ক্ষতি হয়নি।’

বৃষ্টি সময় মেলা ঘুরে বেশ কয়েকটি স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিদের বই গুটিয়ে ভেতরে বসে থাকতে দেখা যায়। কথা হলে তারা জানান, স্টল যিনি তৈরি করেছেন, তিনি ভালো করে করেননি। বৃষ্টির পর ছাদ চুইয়ে পানি নিচে পড়ছে। তাই বাধ্য হয়েই বই গুটিয়ে তাদের বসে থাকতে হচ্ছে।

মেলার ২২তম দিনে নতুন বই ৭৮টি

বৃহস্পতিবার মেলা শুরু হয় বিকেল তিনটায় এবং চলে রাত নয়টা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ৭৮টি।

বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: আসাদ চৌধুরী’ এবং ‘স্মরণ: জাহিদুল হক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে মাহমুদা আকতার এবং কামরুল হাসান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দিলারা হাফিজ, বায়তুল্লাহ কাদেরী এবং মনি হায়দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. মুহম্মদ সামাদ।

প্রাবন্ধিকরা বলেন, কবি আসাদ চৌধুরী ষাটের দশকের বাস্তবতায় একজন ঐতিহ্যমগ্ন কবি। তার কবিতায় জাতীয়তা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকার-চেতনা নান্দনিক সৌকর্যে প্রতিভাত হয়েছে। যার ফলে তার কবিতার মাঝে শৈল্পিক বোধের সঙ্গে স্বজাতির প্রতি সুগভীর ভালোবাসা মূর্ত হয়ে উঠেছে।

বৃষ্টিতে জবুথবু বইমেলার একটি স্টল। ছবি: নিউজবাংলা

আলোচকবৃন্দ বলেন, সদাবিনয়ী, মিষ্টভাষী কবি আসাদ চৌধুরী গণমানুষের কবি। বাহান্নর চেতনাকে বুকে ধারণ করে স্বদেশের প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে তিনি দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতিকে চিত্রিত করেছেন তার কবিতায়।

সভাপতির বক্তব্যে ড. মুহম্মদ সামাদ বলেন, ‘কবি আসাদ চৌধুরী ও জাহিদুল হক তাদের কবিতার মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাই তাদের কবিতা গণমানুষের ভাষ্য হয়ে উঠেছে।’

এদিন ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শিহাব সরকার, শিশুসাহিত্যিক তপংকর চক্রবর্তী, গবেষক হোসনে আরা এবং কথাসাহিত্যিক মিলটন রহমান।

মেলায় নতুন কবিতা, গল্প ও উপন্যাসের সংখ্যা বেশি

মেলার প্রথম দিন থেকেই লেখকবৃন্দ বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হওয়া তাদের বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করে চলছেন। বৃহস্পতিবার ২২তম দিন পর্যন্ত মেলায় নতুন বই এসেছে ২ হাজার ৪০৭টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে কবিতা, উপন্যাস আর গল্পের বই।

বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মেলার দ্বিতীয় দিন থেকে ২২তম দিন পর্যন্ত কবিতার বই এসেছে ৭০৪টি, উপন্যাসের বই এসেছে ৩৬৪টি এবং গল্পের বই এসেছে ২৯৬টি।

বেশ কিছু প্রবন্ধ, ভ্রমণের বই, অনুবাদগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ইতিহাসের, মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণাধর্মী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাজনীতি, রচনাসমগ্র, শিশুসাহিত্য আর ধর্মের ওপর বই তো আছেই।

কবিতা, উপন্যাস ও গল্পের বই বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নতুন লেখকরা তাদের লেখালেখি শুরুই করেন মূলত কবিতা, গল্প আর উপন্যাস দিয়ে। এটি এসব বই বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ।

‘তবে আমি এই বছর বুঝেছি, বিষয়ভিত্তিক বইগুলোর ভালো চাহিদা। তাই তরুণ লেখকদের জন্য আমাদের পরামর্শ থাকবে, তারা যেন এসব বই নিয়েও লিখেন।’

ছবি: ফোকাস বাংলা

উপন্যাসের ওপর উল্লেখযোগ্য বইসমূহ হলো- সাব্বির জাদিদ লিখিত আজাদীর সন্তান, বইটি প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য প্রকাশনী। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখিত পরিণীতা, দেবদাস এবং পল্লিসমাজ, বই তিনটি পুনরায় প্রকাশ করেছে মিজান পাবলিশার্স। সাদাত হোসাইন লিখিত আগুনডানা মেয়ে, বইটি প্রকাশ করেছ অন্যপ্রকাশ।

প্রবন্ধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মোহাম্মদ নুরুল হুদা লিখিত সংস্কৃতি ও সদাচার, পাঠক সমাবেশ প্রকাশিত স্বকৃত নোমান লিখিত বাংলায় ইসলাম: সহজিয়া ও রক্ষণশীল ধারা, অন্যপ্রকাশ প্রকাশিত আবুল কাসেম লিখিত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অর্থনীতি।

কবিতার উল্লেখযোগ্য বইসমূহ হলো- আগামী প্রকাশনী প্রকাশিত শামসুর রাহমানের প্রেমের কবিতা, ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ প্রকাশিত তানজীনা ফেরদৌস লিখিত প্রেমের হুলিয়া জারি হোক তোমার নামে, আসাদ চৌধুরী লিখিত ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত একাত্তরের ৭১ কবিতা।

মুক্তিযুদ্ধের ওপর উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- সুজন বড়ুয়া লিখিত মুক্তিযুদ্ধের কিশোর উপন্যাসসমগ্র, রফিকুর রশীদ লিখিত মুক্তিযুদ্ধের গল্পসমগ্র, আরেফিন বাদল লিখিত এই যুদ্ধ সেই যুদ্ধ: মুক্তিযুদ্ধের গল্প এবং ড. মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম লিখিত মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর বগুড়া। ড. নুসরাত রাব্বি অনূদিত War Heroines Speak বইটি প্রকাশ করেছে শ্রাবণ প্রকাশনী।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আজিজুর রহমান আজিজের লিখা অন্তরে বঙ্গবন্ধু বইটিও প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী।

ভাষা আন্দোলনের ওপর পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত লেখক-গবেষক বদরুদ্দোজা হারুনের লেখা ‘ভাষাশহিদ আবুল বরকত: নেপথ্যকথা’, প্রয়াত কবি বেলাল চৌধুরীর অমর একুশ বিষয়ক স্মৃতি ও ভাবনার সংকলন ‘একুশের স্মৃতি ও ভাবনা’, প্রথমা থেকে প্রকাশিত ভাষা সৈনিক মর্তুজা বশীরের লেখা ‘একুশের লেখা, একুশের আঁকা’ এবং ঝিঙেফুল থেকে প্রকাশিত গাজী হানিফের ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বইগুলো উল্লেখযোগ্য।

জীবনীগ্রন্থের মধ্যে শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান লিখিত বিজয় প্রকাশ থেকে প্রকাশিত কাজী নজরুলের কারাজীবন, অনুপম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আবদুল্লাহ আল-মুতীর স্মৃতিকথা ও সাগরপারের চিঠি, পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত আবদুল মমিন চৌধুরী/সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ শত মনীষীর জীবনী।

ছবি: ফেকাস বাংলা

ইতিহাসের মধ্যে কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত জাহীদ রেজা নূরের ৬ দফা থেকে স্বাধিকার, জ্যোতি প্রকাশ থেকে প্রকাশিত মো. রফিকুল হক আখন্দের বিশ্বজুড়ে আখন্দ বংশ। আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ড. মুকিদ চৌধুরীর জার্মানি: অতীত ও বর্তমান উল্লেখযোগ্য।

রাজনীতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য বই পুথিনিলয় প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আতিউর রহমানের বাংলাদেশ নেতৃত্বের পরম্পরা ও উন্নয়ন। ভ্রমণবিষয়ক উল্লেখযোগ্য বই অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হাসনাত আবদুল হাইয়ের একদা সোভিয়েত ইউনিয়নে, ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত আশির আহমেদের জাপান কাহিনি (দশম খণ্ড)।

গবেষণাধর্মী বইয়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের দৈনিক ঘটনালিপির ওপর লিখা বই ‘একাত্তরের দিনপঞ্জি’, বিরূপাক্ষ পালের ‘বাংলাদেশের অর্থ খাত ও নীতি-অনীতির দ্বন্দ’, আনু মুহাম্মদের ‘অর্থশাস্ত্র’ উল্লেখযোগ্য।

অনুবাদগ্রন্থের মধ্যে ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত মুমিত আল রশিদের মাজার শরিফ-এর আর্তনাদ এবং কিংডম অফ সোলায়মান উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত কবি সুফিয়া কামালের স্মৃতিকথার অনুবাদ 1971: A Dairy, রিজিয়া রহমানের উপন্যাসের অনুবাদ An Untold Story এবং সেলিনা হোসেনের উপন্যাসের অনুবাদ The Glorious Afternoon উল্লেখযোগ্য।

শুক্রবারের আয়োজন

শুক্রবার মেলা শুরু হবে সকাল এগারোটায় এবং চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। সকাল এগারোটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত চলবে শিশুপ্রহর।

সকাল সাড়ে দশটায় বইমেলার মূলমঞ্চে রয়েছে অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।

এ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: আখতারুজ্জামান ইলিয়াস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মামুন হুসাইন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ওয়াসি আহমেদ এবং জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।

এ বিভাগের আরো খবর