বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমার কথা উল্লেখ করে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪ (অ্যাক্ট নং ২৬, ১৯৭৪)’ প্রণয়নের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ তাগিদ দেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা আছে, যা দেশের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখতে পারবে। সে জন্য এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সমুদ্রসীমার সম্পদ আহরণ করে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আছে তরুণ সমাজ। এরা অত্যন্ত মেধাবী। তাদের পথ দেখালেই বীরদর্পে সামনে এগিয়ে যাবে। আমরা সেটাই চাই।’
সামুদ্রিক সম্পদ উত্তোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খনিজ সম্পদসহ সমুদ্রের সব সম্পদ আমাদের উত্তোলন করতে হবে; কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য যথাযথ বিনিয়োগও প্রয়োজন। এ জন্য আলাপ-আলোচনা করছি। ‘আন্তর্জাতিক টেন্ডারও দিয়েছি। আমরা বিশাল সমুদ্রসীমার যথাযথ ব্যবহার করে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই।’
সমুদ্রে সম্পদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনারা আসুন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বিনিয়োগ করে আপনারাও লাভবান হবেন।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা যেখানে রেখে গেছেন, বাংলাদেশ সেখানে থমকে গিয়েছিল। আমরা আবার সেখান থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। আমরা চাই, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ। আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক গড়ে তুলতে চাই।
‘আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াব; মর্যাদা নিয়ে চলব। সব পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে রেখেছি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়োপযোগী করে আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।’
বিভিন্ন দেশের যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘শান্তি প্রগতি ও উন্নতির পথ দেখায়; জাতিকে অগ্রগরমান করে উন্নত জীবন দেয়। আমরা সে জন্য শান্তি চাই; যুদ্ধ চাই না। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সেটি আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হব না, তবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সামর্থ্য থাকতে হবে। ফোর্সেস গোল তৈরি করেছি। সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।’
সমুদ্র এলাকার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিশাল সমুদ্র এলাকায় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে। মাতারবাড়ীতে ডিপ সি পোর্ট করেছি। পায়রা সি পোর্ট করছি। এটা থেকে সমুদ্র বেশি দূরে না। এটার একটা ভবিষ্যৎ আছে। আমরা ধীরে ধীরে উন্নতি করছি; তাড়াহুড়া করছি না।
‘ব্লু ইকোনমি (সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি) বাস্তবায়নে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নৌবাহিনী কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জাতির পিতা অনুভব করেছেন। আমি এই নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে রূপান্তর করেছি। অনেকে বলে, এটা কী দরকার ছিল; আমরা ছোট দেশ। আমরা কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে অনেক বড়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তর সালের পরের সরকার আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিশাল সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি; কোনো রকম উদ্যোগ নেয়নি। আমাদের স্থলসীমানা চুক্তিও জাতির পিতা করে দিয়ে যান। সংবিধান সংশোধন করে সে চুক্তি বাস্তবায়ন করে দিয়ে যান। পরে সেটি আর কার্যকর হয়নি।
‘২১ বছর পর আমরা ক্ষমতায় আসি এবং এ নিয়ে কাজ শুরু করি। এটি করতে হয় গোপনীয়ভাবে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়—এই নীতি মেনে চলেছি। পাশাপাশি আমাদের অধিকারটা আদায়েও সচেতন হই; উদ্যোগ নিই।’