অমর একুশ। মহান শহীদ দিবস। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বায়ান্ন’র এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়া ভাষা শহীদদের কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করলো পুরো জাতি। একুশের প্রথম প্রহর থেকে সবারই ছিলো নত শীর, হাতে ফুল আর কন্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’।
বুধবার দিনটি উপলক্ষে একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২ট ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এর আগে ঘড়ির কাঁটায় ১১টা ৫০ মিনিটে শহীদ মিনারে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে স্বাগত জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
পরে রাত ১১ টা ৫৩ মিনিটে রাষ্ট্রপতি সেখানে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী ও উপাচার্য।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিক, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাসহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের অগণিত মানুষ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় উপস্থিত হন।
হাজারো মানুষ খালি পায়ে বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানে কণ্ঠ মিলিয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের দিকে এগিয়ে যান। একইসঙ্গে তারা সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন এবং অন্যান্য জাতিসত্তার ভাষা ও বর্ণমালা সংরক্ষণের দাবি জানান।
শহীদ মিনার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর একে একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও সিনেট, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো, জাসদ, বাসদ, গণফোরাম, বাংলা একাডেমি, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, শিল্পকলা একাডেমী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহিদ মিনারে আসতে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অনেক বিদেশি নাগরিককে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে।
শুধু রাজধানী নয়, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাতফেরি সহকারে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জেলা-উপজেলা সদরসহ পাড়া-মহল্লায়ও ছিল নানা আয়োজন। অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অনেকে। এসব আয়োজনে শিশুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এই শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় বেঁচে থাকবে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা- এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও ও টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।
মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গের এই দিনটিকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালে। তাই অমর একুশে আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের চেতনার প্রতীক ‘শহীদ মিনার’ এখন এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ সব মহাদেশের বহুভাষিক চেতনার স্মারক। প্রবাসী বাঙালিসহ বিদেশিরাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সেসব দেশে থাকা শহীদ মিনারে।