নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি কক্ষে গলায় ফাঁস দেয়া এক আসামির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
জেলা কারাগারের কর্নফুলী ভবনের ছয়তলার ৫ নম্বর কক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. তুষার ২০১৮ সালে সাংবাদিক ইলিয়াস হত্যা মামলার প্রধান আসামি। ২০২০ সাল থেকে তিনি এ কারাগারে ছিলেন।
জেলা সুপার মোকাম্মেল হোসেন নিউজবাংলাকে বুধবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সন্ধ্যার সময় কয়েদি ও হাজতিদের যার যার কক্ষে চলে যেতে হর্ন বাজানো হয়। তারপর গণনা করা হয়। ঘটনার সময় যমুনার একটি ওয়ার্ডে একজন হাজতির সংখ্যা কম পাওয়া গেলে তার খোঁজ শুরু করেন কারাগারে অফিসরারা। মাইকিং করে যখন তার খোঁজ মিলছিল না। তখন প্রতিটি ভবনের শুরু হয় তল্লাশি।
জেলা সুপার বলেন, এ সময় কর্ম কর্নফুলী ভবনের একটি খালি কক্ষের পাওয় যায় তুষারকে। তিনি দরজার আড়ার সঙ্গে চাদর ছিঁড়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে ছিলেন। তখন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
যে কক্ষে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে সেখানে তুষার একই ছিলেন জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের কারা প্রধান মোকাম্মেল হোসেন বলেন, সাধারণত ওই ভবনের চারতলা পর্যন্ত কয়েদি থাকে। ছয়তলা প্রায় খালি থাকে, আর পাঁচ নম্বর কক্ষ ফাঁকা পেয়ে সেখানে ঢুকে যান তুষার। এরপর ঘটনা ঘটান।
জেলার বলেন, সাংবাদিক ইলিয়াস হত্যা মামলার ২০২০ সালে এ কারাগারে আসেন আসামি তুষার। থাকতেন যমুনার একটি ওয়ার্ডে। কিছুদিন ধরে তিনি কারাগারের মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন। এমনকি তাহাজ্জুদ নামাজও বাদ দিতেন না। প্রায় সময় অন্য হাজতিদের কাছে দোয়া চাইতেন।
তিনি বলেন, তিন দিন তুষার তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে দেয়া চেয়েছে বলেও জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মামলার বিচার শেষের দিকে হওয়ায় তুষার পরিকল্পতিভাবে আত্মহত্যা করেছেন। এখন কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে আত্মহত্যা করেন তাহলে সেটি রোধ করা কঠিন।
মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে সম্পৃক্ত থাকায় তুষারের বিষয়ে পত্রিকায় লেখালেখি করেছিলেন ইলিয়াস। এ ছাড়া ২০১৮ সালে মাদক বিক্রিতে বাধা দেয়ায় শামীম নামে এক যুবকের সঙ্গে তুষারের ঝগড়া হয়। সে সময় তুষার লাঠি দিয়ে শামীমের মাথায় আঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনায় শামীম তুষারের বিরুদ্ধে মামলা করলে স্থানীয় সাংবাদিক ইলিয়াস উসকানি দিয়েছিলেন বলে ধারণা করে তুষারসহ কয়েকজন মিলে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন সাংবাদিক ইলিয়াসকে।
এ ঘটনায় নিহত সাংবাদিক ইলিয়াসের স্ত্রী বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে বন্দর থানায় হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয় তুষারকে।
পুলিশ ও কারাকর্তৃপক্ষ বলছে, গত তিন বছর ধরে ২৮ বছর বয়সী তুষার যমুনা ভবনের দ্বিতীয় তলার তিন নম্বর কক্ষে ছিলেন। তার বাবার নাম জামান মিয়া। স্থানীয় সাংবাদিক ইলিয়াস হত্যা মামলায় তুষার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটির এখন বিচারিক আদালতে স্বাক্ষ্যগ্রহণ চলমান রয়েছে।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাসুজ্জামান জানান, মামলাটির বিচারকার্য শেষের দিকে, এখন সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান। এ মামলার অন্য আসামিরাও গ্রেপ্তারের পর কারাগারে রয়েছেন।