বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গুলির শব্দ কমেছে সীমান্তে, শাহপরীর দ্বীপ রক্ষার দেয়াল নাফ

  • রহমত উল্লাহ, টেকনাফ (কক্সবাজার)    
  • ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১০:৪২

টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। এখন মোটামুটি গোলাগুলি থেমেছে। তবে যেকোনো সময়ে কোনো রোহিঙ্গাকে আমরা অনুপ্রবেশ করতে দেব না।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘর্ষ কিছুটা কমেছে। গত চার দিন ধরে ওপার থেকে আসা গোলাগুলির তেমন কেনো শব্দ শুনতে পাননি সীমান্তের মানুষ। তবে সকালের দিকে কিছুটা গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

সীমান্তে বসবাস করা একাধিক ব্যক্তি নিউজবাংলাকে এসব তথ্য দিয়েছেন। তারা বলছেন, গুলির শব্দ খুবই কম। মাঝেমধ্যে যা আসে, এসব গুলির শব্দও আগের মতো বিকট না।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী মো আলম জানান, গত সপ্তাহের শেষ দিকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল, বিমান হামলা ও গোলাগুলিতে এপারের সীমান্তের মানুষের ঘরবাড়িও কেঁপে উঠেছে। আতঙ্কে ছিলেন সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত লোকজন।

তিনি বলেন, আমাদের নাফ নদের পরে মিয়ানমার। গোলাগুলি হলেও এখানে শব্দ ভেসে আসে, কিন্তু গুলি এখানে এসে পড়ে নাই। তার কারণ হচ্ছে নাফ নদ। নাফ নদ আমাদের জন্য ছায়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা না থাকলে তুমব্রুর মতো বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হতো। শাহপরীরদ্বীপ রক্ষার দেয়াল নাফ নদ।

মো. আলম নাফ নদের দিকে হাত দেখিয়ে বলেন, নাফ নদ পেরিয়ে এখানে কখনো গোলা এসে পড়বে না, যদি তারা নাফ নদে এসে যুদ্ধ না করে। তখন পর্যন্ত আমাদের ছায়া নাফ নদ।

বাংলাদেশের দক্ষিণের শেষ সীমান্ত এলাকায় কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ। এটি লাগোয়া প্রায় ৪ কিলোমিটার নাফ নদ। এই নদঘেঁষা মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও জান্তা সরকারের মধ্যে সংঘর্ষের প্রভাব পড়ছে এপারে শাহপরীর দ্বীপে। তবে এই নাফ নদ এখনকার মানুষের জন্য রক্ষার দেয়াল হিসেবে আছে। শাহপরীর দ্বীপ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

নাফ নদ সংলগ্ন এলাকায় জালিয়া পাড়া, বাজার পাড়া, গোলার পাড়া, মিস্ত্রী পাড়া। আর বেড়িবাঁধ পাশে বড় মাদ্রাসায় যেখানে হাফেজ খানা এতিম শিশুদের লেখা পড়া করা হয়। যখন গোলাগুলি হতো তখন হেফজ বিভাগের ছাত্ররা বেশি ভয় পেতেন। তারা ভয়ে ঘুম থেকে উঠে যেতেন।

হেফজ বিভাগের ছাত্র মো. সেফায়েত বলেন, গভীর রাতে গোলাগুলি হলে মনে করি আমাদের মাদ্রাসার ওপর দিয়ে পড়তেছে, এমনটাই মনে করতাম। আমরা সবাই আতঙ্কে ঘুম যেতাম না। এখন আর গোলাগুলি হচ্ছে না।

টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, শেষ চারদিন তেমন গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। কয়েকটি গুলির শব্দ মাঝেমধ্যে শোনা গেলেও তা ছিল খুব কম আওয়াজে। তবে সপ্তাহ আগে যেভাবে বিকট গোলার শব্দ পেয়েছিলাম, এর আগে কখনও এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি।

তিনি বলেন, যদি নাফ নদী না থেকে স্থলসীমানা হলে এতক্ষণ ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হতো। অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটতো। নাফ আমাদের শাহপরীর মানুষকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে। লোকজন স্বাভাবিকতায় ফিরতে শুরু করেছে। এছাড়া সীমান্তে বিজিবি সর্তক অবস্থানে থাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ রয়েছে।

শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, গত শুক্রবার থেকে গোলাগুলির শব্দ তেমন নেই। সারাদিন মিলে ১০-২০টার বেশি নয়। এভাবে আগেও বিভিন্ন সময়ে গুলির শব্দ শুনতাম। এগুলো নিয়ে আমরা তেমন আতঙ্কিত নয়। আমরা আশাবাদী দ্রুত এ সমস্যা কেটে যাবে।

শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলাগুলির কারণে নাফ নদের জেটিতে জেলেদের বড়শি ও জাল নিযে মাছ ধরা গত রোববার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি কমলেও এখনো জেটিতে উঠতে বাঁধা দিচ্ছে বিজিবি। গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ অনেকটা বন্ধ হলেও জেলেদের জন্য জেটিতে উঠানামা এখনো উন্মুক্ত না হওয়ায় দুইদনি ধরে বেকার দিন কাটাচ্ছেন তারা।

জেলে আব্দুর রহমান বলেন, ‘বড়শি নিয়ে মাছ ধরে ঘর চলে, এখন দুইদিন জেটিতে উঠতে পারি না।’

দেশের দক্ষিণের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্ট মার্টিন থেকেও মর্টার শেল ও গোলাগুলির তেমন শব্দ শোনা যাচ্ছে না। সেখান থেকে শুধু সকালে কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গেছে সোমবার। সারাদিন সেন্ট মার্টিন সীমান্ত ছিল নীরব। এর আগে গত সপ্তাহে দ্বীপের বাসিন্দারা মিয়ানমারের সংঘাতের বিকট শুনতে পেয়েছিলেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও মটার শেলের শব্দ বন্ধ হওয়ায় দ্বীপে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর স্বস্তি প্রকাশ করছেন।

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে খবর নিয়ে জানা গেছে, আরাকান আর্মি রাখাইনের মংডু শহরের উত্তরের এলাকাগুলোতে বেশ শক্তি দেখিয়েছে এবং মিয়ানমার বাহিনীর কয়েকটি ঘাঁটিও নিজেদের দখলে নিতে সক্ষম হয়। তবে তারা মংডুর দক্ষিণে গিয়ে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে সহসা তারা মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর সাথে পেরে উঠছেন না। এ ছাড়া মংডুর দক্ষিণ দিকের এলাকাগুলোতে নতুন করে শক্তি বৃদ্ধি করেছে মিয়ানমার বাহিনী।

ইয়াবা কারবারের কারণে ২০১৭ সাল থেকে নাফ নদে মাছ ধরার ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা সোনা মিয়া বলেন, মিয়ানমারে যুদ্ধের কারণে নাফ নদের মোহনা ও সমুদ্রে গিয়ে জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না। বড় দু-একটি নৌকা সমুদ্রে গেলেও অধিকাংশ মাঝিমাল্লা ঘরে বসে আছেন।

টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। এখন মোটামুটি গোলাগুলি থেমেছে। তবে যেকোনো সময়ে কোনো রোহিঙ্গাকে আমরা অনুপ্রবেশ করতে দেব না।

এ বিভাগের আরো খবর