মহান একুশের চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বলেছে, বিএনপির এক দফার আন্দোলন চলবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এমন ঘোষণা দেন।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। এর আগে ভাষা আন্দোলন ও চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সভায় বিএনপি নেতারা বলেন, বায়ান্নর আন্দোলন শুধুই ভাষার আন্দোলন ছিল না। সেটি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা পর্ব। ভাষা আন্দোলনের চেতনাই পরবর্তীতে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিতে প্রেরণা জুগিয়েছে। আজ দেশে গণতন্ত্র নেই, কথা বলা ও লেখার স্বাধীনতা নেই। জনগণের ভোটাধিকার নেই। ফলে বিএনপির এক দফার যে আন্দোলন তা অব্যাহত থাকবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। পরিচালনা করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম।
জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়নে যা করেছেন তা বলে শেষ হবে না। তিনি দেশের কৃষির উন্নয়নে খাল খনন কর্মসূচি নেন। শিক্ষার উন্নয়নে অসংখ্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দেশকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেন। তিনি আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। জিয়ার শাসনামলে যে নির্বাচন হয়েছিলো সেখানে সব দল অংশ নিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বন্দি করে কারাগারে পাঠাননি। ইনশাআল্লাহ আবারও তার নেতৃত্বে বিএনপি সফল হবে। তার যোগ্য পুত্র তারেক রহমান দলের হাল ধরেছেন। আজকে তিনি দেশে আসতে পারছেন না। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ফিরবেন। বিএনপি মানেই শান্তি ও গণতন্ত্র। বিএনপি মানেই সাধারণ মানুষের উন্নতি ও সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধম্যেই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঘটে। তার আগে মাতৃভাষার চেতনাকে কেন্দ্র করেই ৬৯, ৭০ পর্যন্ত এসেছিলাম। আমরা পাকিস্তানিদের বলেছিলাম- তোমাদের বৈষম্যের শাসন মানি না। সেদিন বাঙালি তাদের ব্যালটের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তারা তাদেরকে চায় না। ফলে পাকিস্তান মুসলিম লীগ সরকারের ভরাডুবি হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তিনি তো চূড়ান্ত ঘোষণা দেননি। ফলে নেতৃত্বের শূন্যতা দেখা দিলে জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের কাছে দিশারী, অসময়ের কাণ্ডারি হয়ে ওঠেন। তিনি হানাদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এ কথা যারা অস্বীকার করে তারা কাপুরুষ। অথবা স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের কোনো অবদান নেই।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘এই সরকার হলো পাকিস্তানের প্রেতাত্মা সরকার। এদের কোনো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নেই। আবার তারাই বলে, আমি তো থাকতে চাই নাই। কিন্তু জনগণ আমাকে ছাড়লো না। আসলে এদের কোনো লাজলজ্জা নেই। নৈতিকতা নেই।
‘তারা আমাদের নেতাদের নিয়ে কটূক্তি করছে। যখন খুশি মামলা দিচ্ছে। বিচারকরা কোনো যাচাই-বাছাই করেন না। নির্যাতন-নিপীড়ন করে পাকিস্তানের রক্ষা হয়নি। এই আওয়ামী লীগ সরকারও পারবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সেটি আজ ভূলুণ্ঠিত। এই সরকার ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আমরা এই দুটি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আন্দোলন করছি।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমাদের সব অধিকার কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সেসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করা হয়েছিল। সেই আন্দোলন আমাদেরকে আজও গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জোগায়।’
তিনি বলেন, ‘আজ ছাত্রসমাজের কী করুণ দশা। প্রতিদিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা নারীদেরকে লাঞ্ছিত ও সম্ভ্রমহানি করছে। তারা দখলদারত্ব কায়েম করেছে। তারা নদী দখল, ভূমি দখলসহ সবকিছু দখলের মাধ্যমে ধ্বংস করেছে।
‘শুধু ইট-কাঠ দিয়ে উন্নয়ন হয় না। এখানে কথা বলা ও লেখার কোনো স্বাধীনতা নেই। পেঁয়াজ ও রসুনের উৎপাদন বাড়লেও দেশের কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। ক্ষমতাসীনদের চাঁদাবাজির কারণে সব পণ্যের দাম বেড়েছে।’
তিন আরও বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করে একতরফা ডামি নির্বাচন করেছে ৭ জানুয়ারি। এই সরকার সবচেয়ে ভয় পায় বিএনপিকে, যার নেত্রী খালেদা জিয়া।
‘আমাদের আন্দোলন চলমান। আমরা ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। জনগণ তাতে সাড়া দিয়েছে। ফলে আমরা সফল হয়েছি। দেশের সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ঘটিয়ে সত্যিকারের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আজকে আমরা এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাবো। লড়াই হচ্ছে সহজাত প্রবৃত্তি। দেশের মানুষ আজ অসহায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ছাত্র-যুবক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে এবং এই সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা ঘরে ফিরবো।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুকসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।