বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বৃদ্ধ দম্পতির বাড়ির দরজার তালা গেল কোথায়?

  •    
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:২০

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ও পৌর প্রশাসন সরেজমিন পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট বাড়ির ফটকে কোনো তালার অস্তিত্ব পায়নি। এ সময় তাদের সঙ্গে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানও ছিলেন। অথচ বৃদ্ধ দম্পতি সন্ধ্যায়ও তালাবদ্ধ গেটের বাইরে অবস্থান করছেন। আর এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

ঠাকুরগাঁওয়ে বৃদ্ধ দম্পতিকে ভাড়া বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাড়ির মূল ফটকে ইউপি চেয়ারম্যান তালা ঝুলিয়ে দেয়ার ঘটনার তিনদিন পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে সদর উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ।

সোমবার বিকেল ৩টার দিকে পৌর এলাকার শান্তিনগর মহল্লায় ওই বাড়ি পরিদর্শন করেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান ও পৌরসভার স্থানীয় সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর স্বপ্না আকতার।

অভিযুক্ত জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, স্কুল শিক্ষিকা ফারহানা ইসলাম কলিসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সদরের ইউএনও ও পৌরসভার কর্মকর্তারা সোমবার ঘটনাস্থল বাড়িটির সামনে গিয়ে তালা খুঁজে পাননি। তারা চলে আসার পরই আবার তালা ঝুলানো দেখা গেছে। ছবি: নিউজবাংলা

ইউএনও এ সময় স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বললেও ওই বৃদ্ধ দম্পতির দেখা পাননি। তাৎপর্যের বিষয় হলো, পরিদর্শনের সময় বাড়িটির ফটকে ইউএনও কোনো তালা ঝুলতে দেখেননি। এমনকি সেই তালাও তিনি উদ্ধার করতে পারেননি।

পরিদর্শন শেষে ইউএনও বলেন, ‘আমি সেখানে কোনো তালাবদ্ধ ঘর দেখিনি। ভুক্তভোগী ওই দম্পতিরও দেখা পাইনি। এজন্য ঘর থেকে বের করে দিয়ে মূল ফটক তালাবদ্ধ করে রাখার সংবাদের সত্যতাও যাচাই করা সম্ভব হয়নি।’

তবে পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগী ভাড়াটে আব্দুল হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইউএনও। এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে এসে বৃদ্ধ দম্পতিকে না পেয়ে পরে আমি মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগী আব্দুল হালিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করি। তখন তিনি জানান যে গাড়ি চালাচ্ছেন। তাকে পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’

অন্যদিকে এক ঘণ্টা পর বৃদ্ধ আব্দুল হালিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঘটনার তিন দিনেও আমাদের কেউ খোঁজ নেয়নি। দেখা করতেও আসেনি। তাই জীবিকার তাগিদে কাজে বের হয়েছি।

‘ইউএনও সাহেব যদি নারী কাউন্সিলরকে দিয়ে বার্তা পাঠাতেন যে আজকে (সোমবার) তারা আসবেন তাহলে আমি কাজে বের হতাম না। আর কেবলই খবর নিলাম যে আমাদের বাড়ির ফটকটিতে এখনও তালা দেয়া আছে। আর ভেতরে গতকাল (রোববার) থেকে চেয়ারম্যানের লোকজন অবস্থান করছিল। আমাদের মালপত্র সব ভেতরে।’

তালা খোলার অপেক্ষায় বাড়ির বাইরে ফটকের সামনে বৃদ্ধ দম্পতি। ছবি: নিউজবাংলা

সবশেষ সংবাদ মিলেছে যে, তালাবদ্ধ ফটকের পাশে বাড়ির বাইরে বেঞ্চে অবস্থান করছেন বৃদ্ধ দম্পতি। অথচ ইউএনও পরিদর্শনের সময় তিনি ফটকে লাগানো দুটি তালার একটিও দেখেননি। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে- তাহলে তালা গেল কোথায়? প্রশাসনের পরিদর্শনের সময় কি তাহলে চেয়ারম্যানের লোকজন তালা সরিয়ে রেখেছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, ‘ভাড়াটে বৃদ্ধ দম্পতি তালাবদ্ধ ফটকের বাইরে যে স্থানে অবস্থান করছিলেন সেই ফটকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তালা ঝুলছে। কেন সেই তালা খোলা হয়নি এবং ইউএনও তাহলে কোন বাড়ি পরিদর্শন করলেন- এমন প্রশ্নও স্থানীয়দের মাঝে রয়েছে।

প্রকাশিত সংবাদের বরাতে সচেতন নাগরিক মাহাবুব আলম বলেন, ‘বৃদ্ধ দম্পতির ভাষ্যমতে, ঘরের ভেতরে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে। মূল ফটকে তালা দেয়া থাকায় তিন দিন ধরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন না তারা। সেহেতু তাদেরকে জানিয়ে এখানে আসতে পারতেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। এখন দ্রুততার সঙ্গে প্রশাসনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।’

আব্দুল হালিমের স্ত্রী বৃদ্ধা জোৎস্না বেগম বলেন, ‘আমি সকাল থেকে বাড়ির সামনে বেঞ্চে বসে ছিলাম। দুপুরের দিকে কয়েকজন যুবক এসে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলছিলো গতকাল আমি যা বলেছি তার সবই নাকি মিথ্যা। তারা আমাকে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করছিলো।

‘আমি এতো করে বলছিলাম যে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে চেয়ারম্যান তালা দিয়েছে; কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দেয়া লোকগুলো বার বার আমাকে চাপ দিচ্ছিলো। আমি এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। এরপর লোকগুলো আমাকে একটু দূরে নিয়ে যায় এবং আরও উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে৷ আমি ভয় পেয়ে ওখান থেকে দূরে সরে থাকি। ইউএনও সাহেব আসবে জানলে কোথাও যেতাম না।’

সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মোছা. স্বপ্না আকতার বলেন, ‘পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি আজই প্রথম সেখানে গিয়েছি। আমাকে ওভাবে কেউ কোনো কিছু জানায়নি।’

পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামানের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, ‘বৃদ্ধ দম্পতির ঘটনায় বাড়িওয়ালা ফারহানা ইসলাম কলি বাদী হয়ে আজ (সোমবার) একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি।’

ঠাকুরগাঁও সদরের ইউএনও বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমি এখনও ভুক্তভোগীর সঙ্গে ওভাবে কথা বলতে পারিনি। আরও কথা বলে বিস্তারিত জেনে জেলা প্রশাসককে লিখিত প্রতিবেদন দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর