বিদেশের কারাগারে ৯ হাজার ৩৭০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি আটক রয়েছেন বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, বিশ্বের ২৬টি দেশে এসব বাংলাদেশি আটক রয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাঁচ হাজার ৭৪৬ জন আটক রয়েছেন সৌদি আরবের কারাগারে।
সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে স্বতন্ত্র সদস্য হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
ড. হাছান মাহমুদ জানান, বিদেশে দায়িত্বরত মিশনগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পর্তুগালে এক, মিসরে ছয়, ইতালিতে ৮১, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩৮৫, কোরিয়ায় ছয়, শ্রীলঙ্কায় তিন, কাতারে ৪১৫, লিবিয়ায় ৯, স্পেনে ১৯, হংকংয়ে ১২২, সিঙ্গাপুরে ৬৬, ব্রুনাইয়ে ১৬, চীনের বেইজিংয়ে ১৮৪ ও কুনমিংয়ে সাত, আবুধাবীতে ৪০৪, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৯, সৌদি আরবে পাঁচ হাজার ৭৪৬, মালয়েশিয়ায় ২১৯, আলজেরিয়ায় এক, থাইল্যান্ডে চার, লেবাননে ২৮, গ্রিসে ৪১৪, ইরাকে ২১৭, তুরস্কে ৫০৮, মিয়ানমারে ৩৫৮, জাপানে দুই ও জর্ডানে ১০০ জন বাংলাদেশি কারাগারে আটক রয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদকে জানান, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি এই সময় পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২২৬ জন আটক বাংলাদেশিকে লিবিয়া থেকে, ৫১ জনকে ফ্রান্স ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের কারাগার থেকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে।
এছাড়া ভারত, মিয়ানমার এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের কারাগারে আটক থাকা আরও ১ হাজার ৯৫০ জনকে ফেরত আনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাদের দ্রুত মুক্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছেন। বিভিন্ন দেশে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে আটক শ্রমিক-প্রবাসী কর্মীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো দ্রুততার সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানা এবং পাবলিক প্রসিকিউশন অফিসের সঙ্গেও সর্বদা যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
ড. হাছান বলেন, ‘কারাগারে আটক প্রবাসী কর্মীদের আদালত কর্তৃক বিচারকালীন সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের একজন প্রতিনিধি বা আইন সহকারী কোর্টে উপস্থিত থেকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করে থাকেন। বিভিন্ন অভিযোগে আটক শ্রমিক বা প্রবাসী কর্মীদের পরিবারের চাহিদা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট দেশের আইনজীবি/ল’ ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে দূতাবাস সর্বাত্মক সহযোগিতা করে থাকে।
কারাগারে আটক শ্রমিক-প্রবাসী কর্মীদের সাজার মেয়াদ শেষ হলে তাদের অতি দ্রুত দেশে পাঠানোর জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিশেষ ট্রাভেল পারমিট ইস্যু ও টিকিট কিনে দেয়া হয়। আর্থিক অভিযোগে আটক শ্রমিক বা প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক দায় পরিশোধ ও দেশে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা ও দানশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে দূতাবাস যোগাযোগ করে থাকে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দণ্ড মওকুফের জন্য বাদীদের সঙ্গে দূতাবাসগুলো সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে বলে সংসদকে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে মার্জনার অনুরোধ সম্পর্কিত সংশ্রিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্র দেয়া হয়ে থাকে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ক্ষেত্রে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে আদালতের মাধ্যমে সমঝোতা করে ব্লাডমানি/রক্তপণ পরিশোধপূর্বক মৃত্যুদণ্ড মওকুফকরণের ব্যবস্থা করে।
দৃতাবাসগুলো প্রবাসে কারাবন্দি বাংলাদেশিদের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং বিচার বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে।