বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)-এর প্রতিবেদনে বাস্তবতার কোনো প্রতিফলন নেই বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ২০২৩ সালের মে মাসে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আরএসএফ।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)’র প্রতিবেদন ও র্যাংকিং নিয়ে সোমবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ব্রিফ্রিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরএসএফ-এর ওয়েবসাইটে যে প্রতিবেদন ও র্যাংকিং প্রকাশ হয়েছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও সাধারণ জনগণের মধ্যে হতাশা আছে।
‘প্রতিবেদনে ভুল, অর্ধসত্য ও অপর্যাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৬৩তম দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ক্রমবিকাশ, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার জন্য বর্তমান সরকারের অব্যাহত উদ্যোগকে অস্বীকার করা হয়েছে।’
আরাফাত বলেন, দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার অবাধ স্বাধীনতার প্রকৃত চিত্রের বিপরীতে আরএসএফের মূল্যায়ন অগ্রহণযোগ্য, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সত্যের বিচ্যুতি বলে মনে করে সরকার।
‘আরএসএফের ওয়েবসাইটে ছয়জন সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম রতন, আহমেদ খান বাবু, গোলাম মোস্তফা রফিক, খলিলুর রহমান, মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান এবং এস এম ইউসুফ আলী সম্পর্কে তথ্য দেয়া হয়েছে যে তারা আটক হয়ে জেলে আছে। সবশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী তাদের নিয়ে আরএসএফের এই দাবি অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আরএসএফ-এর প্রতিবেদনে প্রচুর ভুল, অর্ধসত্য, অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে র্যাংকিং করা হয়েছে। এ ধরনের সূচক বা র্যাংকিংকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অনেকেই আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলতে চান যে আমাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। এই র্যাংকিং পুনর্মূল্যায়নের জন্য আরএসএফকে দাপ্তরিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আরএসএফ-এর বাংলাদেশ অধ্যায়ে বর্ণিত তথ্য অসম্পূর্ণ, অপর্যাপ্ত এবং বিভ্রান্তিকর।
আরাফাত বলেন, ‘আরএসএফ’র দাবির বিপরীতে দেখা যায় ২০০৯ সাল থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সরকারি গণমাধ্যমের চেয়ে বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেল সম্প্রসারণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাইবার স্পেসকে সন্ত্রাসী, মৌলবাদী ও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) চালু করে। এই আইনের কিছু ধারা নিয়ে উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ডিএসএ বাতিল করে এর পরিবর্তে ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) প্রণয়ন করে।
‘এই আইনে সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত মানহানি মামলায় সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের পরিবর্তে আইন তলব করার বিধান রাখা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আইনগত প্রেক্ষাপট নিয়ে আরএসএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনের উদ্বেগ এই মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক নয়। এ বিষয়গুলো আরএসএফের পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত এবং তার একটা প্রতিফলন তাদের পরবর্তী প্রতিবেদনে থাকা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও গণমাধ্যমের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা বজায় রাখতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। তবে, বর্তমান সরকার গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সঙ্গে নিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বহুমুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে মানসম্মত বেতন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে সরকার নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন করেছে। দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। এ ভালো উদ্যোগগুলো আরএসএফের প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সত্য দিয়ে অসত্য মোকাবেলা করতে চাই। গণমাধ্যমের পরিবেশ নিয়ে যেখানে সত্যিই উন্নতি করার সুযোগ আছে সেখানে সরকার তা করবে। আমরা সত্যিকার অর্থেই আরএসএফ-এর র্যাংকিংয়ে উপরে উঠতে চাই।’