রাজশাহীতে বরই খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে তিন দিনের ব্যবধানে দুই বোনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রতিনিধি দল সোমবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে।
এদিকে প্রাণ হারানো দুই শিশুর মা ও বাবাকে রামেক হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হয়েছে। তারা বাড়িতে আইসোলেশনে থাকবেন।
অসুস্থতার লক্ষণ দেখে দুই শিশুর মারা যাওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল নিপাহ ভাইরাসের কারণে তারা প্রাণ হারাতে পারে, তবে নমুনা পরীক্ষার পর আইইডিসিআর জানিয়েছে, নিপাহ ভাইরাসে নয়, অন্য কোনো কারণে তাদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
বরই খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে মারিশা ও মাশিয়ার মৃত্যুর পর তাদের নমুনা পাঠানো হয় ঢাকায় আইইডিসিআরে। দুই শিশুর মৃত্যুর পরে তাদের বাবা-মাকে হাসপাতালের নিপা ওয়ার্ডে আইসোলেশনে রাখা হয়।
আইইডিসিআর থেকে রোববার সন্ধ্যায় জানানো হয়, এ দুই শিশু নিপাহ ভাইরাসে মারা যায়নি। অন্য কোনো কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
অন্য কোন কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে, এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি। সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা থেকে আসা আইইডিসিআরের তিন সদস্যের তদন্ত দল শিশুদের বাবা মিজানুর রহমান ও মা পলি খাতুনের সঙ্গে কথা বলেছেন। দুই শিশু ও তাদের বাবা-মায়ের রোগের কেস হিস্ট্রির বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেন তারা। এ ছাড়া মৃত দুই শিশুর নমুনাও সংগ্রহ করে প্রতিনিধি দল।
পরে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহমেদ বলেন, ‘মৃত দুই শিশু ও তারা বাবা মা কী রোগে আক্রান্ত, তার সঠিক কারণ বের করতে আইইডিসিআর অধিকতর তদন্তের জন্য এখানে এসেছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ বের করতে তারা কাজ করছে। ঢাকায় পাঠানো আগের নমুনা পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
‘এ ছাড়া মৃত শিশুদের পাকস্থলির খাবারের নমুনা হাসপাতালে সংরক্ষণ করে রাখা আছে। পাকস্থলি ঢাকায় পাঠিয়ে বিষক্রিয়া ছিল কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।’
এদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ওই দুই সন্তানের বাবা-মায়ের গতকাল জ্বর ছিল। আল্লাহর রহমতে আজকে আর জ্বর নেই।
‘যেহেতু কোনো ভাইরাস এখনও শনাক্ত করা যায়নি, সেহেতু তাদের নিজ বাসাতেই আইসোলেশনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও আজকেই রিলিজ দেয়ার জন্য বলেছি।’
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শনিবার বিকেলে মারা যায় মাশিয়া। গত বুধবার একই লক্ষণ নিয়ে মারা যায় তার ছোট বোন মারিশা। পরে শিশুদের বাবা-মাকে হাসপাতালের নিপাহ আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
প্রাণ হারানো দুই শিশুর মধ্যে মুনতাহা মারিশার বয়স ২ ও মুফতাউল মাশিয়ার বয়স ৫ বছর। তারা রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের মনজুর রহমানের সন্তান।
মনজুর রহমান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। স্ত্রী পলি খাতুন ও সন্তানদের নিয়ে রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে থাকতেন তিনি।