ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শুক্রবার ভাড়াটিয়ার বাসার ফটকে তালা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ওই ভাড়াটিয়া দম্পতির ভাষ্য, পরিবার নিয়ে ১০ দিন আগে তারা ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। এরই মধ্যে গত শুক্রবার ভোররাতে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন তাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির বাইরে বের করে ফটকে তালা দেন। ঘরের ভেতরে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে। কিছুই বের করতে দেয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত তারা তালা খোলার অপেক্ষায়।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রোববার বিকেলে বাড়ির ফটকে টিনের বেড়ার সঙ্গে শিকল দিয়ে দুটি তালা ঝুলছে। আর বৃদ্ধ দম্পতি বাড়ির বাইরে বেঞ্চে বসে আছেন।
অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান লিটন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
ওই দম্পতি হলেন আবদুল হালিম ও তার স্ত্রী জোৎস্না বেগম। তাদের অভিযোগ, ঘটনার পর থেকে স্থানীয় লোকজন কোনো প্রতিবাদ করছে না।
আবদুল হালিম বলেন, ‘আমরা ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেছি। জায়গা-জমি নিয়ে বাড়ির মালিকের সঙ্গে কার কী সমস্যা আছে, সেটা আমাদের বিষয় না, কিন্তু আমাদের সঙ্গে এমন অন্যায় কেন করা হলো? আমরা বিচারের দাবি জানাই।’
তিনি বলেন, ‘আমি একটি বেসরকারি কোম্পানির ট্রাক চালাই। এভাবে এমন পরিস্থিতিতেও বাইরে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে কাজে যেতে হয়। আমাদের হাঁড়ি-পাতিল, আসবাপত্র কাপড়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবই বাড়ির ভেতরে। বাড়ির ভেতরে এখন অন্য অচেনা লোকেরা অবস্থান করছে।’
বাড়ি ভাড়া দেয়া স্কুল শিক্ষিকা ফারহানা ইসলাম কলি বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। এটি পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত এলাকা। এখানে স্থানীয় কাউন্সিলর রয়েছে। ঘটনার দিন আমার স্বামী কাউন্সিলরকে জানিয়েছে।
‘এখনও কোনো সমাধান আসেনি। একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কোন আইনে অন্যের বাড়িতে ঢুকে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারে? পুলিশকে জানিয়েছি, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তালাতে হাত দিলে হাত কেটে নেবে চেয়ারম্যান, এমন হুমকিও আমাদের দিয়েছে। আমরা এখন প্রত্যেকে আতঙ্কিত ও অনিরাপদ।
‘ভাড়াটিয়া দম্পতি আমার বাড়িতে যেতে চায় না। এখন তাদের মধ্যে অনেক রাগ-আক্ষেপ রয়েছে আমাদের সবার ওপর।’
স্থানীয় গৃহবধূ আমিনা বেগম বলেন, ‘তালা দেয়ার পর থেকে আমরা আর ঘরে ঢুকতে পারিনি। আমার স্বামী দিনমজুর। সে কলি আপার বাড়িতে বেড়া বানানোর কাজ করছিল। আমাদেরও ভয় দেখানো হচ্ছে।’
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর জমিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনা শুনে প্রথমে আমি জায়গা চিনতে পারিনি। এই প্রতিবেদক এই বিষয়ে আমাকে জানায়। এরপর স্কুলশিক্ষিকার স্বামী জুয়েল ইসলাম তাকে মোবাইলে কল দিয়ে যোগাযোগ করা হয়। এ ছাড়াও আমি ভাড়াটিয়া আবদুল হালিমের কাছেও ঘটনাটি শুনি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। আমি দুদিন সেখানে গিয়েছি। অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরাও গিয়েছিল।’
এ সময় তিনি তালা দেয়া ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর বলেন সরাসরি সাক্ষাৎকার নিতে।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নির্মল রায় জানান, ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে সেখানে যান তিনি। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।