বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাজশাহীতে আবাস গড়ায় বাড়ছে আগ্রহ

নগরীর বাসিন্দাদের ভাষ্য, এখানে কিছু সুযোগ সুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো, শহরে কোনো যানজট নেই। আছে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ ও নাগরিক নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য পরিবেশ।

বাড়ি তৈরি করতে পছন্দের জায়গায় খুঁজতে গিয়ে রাজশাহী শহর এখন বিভিন্ন জেলার মানুষের পছন্দের আবাসস্থল। নগরীর আধুনিকায়ন, প্রশস্ত রাস্তা, সড়কবাতির আলোকায়ন এ শহরের প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি করছে।

জেলার আবাসন ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকেও মানুষ জায়গা কিনছেন এ শহরে। বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন তারা। অনেকেই সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য এ শহরে গিয়ে পরবর্তী সময়ে বাড়ি বানাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, ৯৭ বর্গকিলোমিটারের এ জনপদে এখন বসবাস প্রায় ১২ লাখ মানুষের। ২০১০ সালেও রাজশাহী শহরে দশ তলা ভবনের সংখ্যা ছিল একেবারেই হাতে গোনা, কিন্তু এখন এ সংখ্যা অগণিত। আর দশ তলা থেকে একুশ তলা পর্যন্ত ভবনের সংখ্যাই এখন শতাধিক।

বাইরের জেলাগুলো থেকে মানুষ রাজশাহী শহরমুখী হওয়ায় এখানকার জমির দাম বাড়ছে, তারপরও এ নগরীর কিছু সুবিধার কারণে এখানে ছুটে আসছেন মানুষ।

সংশ্লিষ্ট তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীতে যারা বসতি গড়ছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই পার্শ্ববর্তী নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরের মানুষ বেশি। এ ছাড়াও ঢাকা থেকে চাকরি জীবন শেষে করে একটু শান্তিতে বসবাসের জন্য অনেক অবসরপ্রাপ্তরাও এখন বেছে নিচ্ছেন এ শহর।

নগরীর বাসিন্দাদের ভাষ্য, এখানে কিছু সুযোগ সুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো, শহরে কোনো যানজট নেই। আছে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ ও নাগরিক নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য পরিবেশ।

রাজশাহী নগরীর বহরমপুর এলাকায় একটি বাড়ি কিনেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জে তেমন ভালো স্কুল নেই। এ ছাড়াও তেমন সুযোগ সুবিধাও নেই। ছেলে মেয়েদের মানুষ করতেই তাই আমরা রাজশাহীতে এসেছি। ভালো লাগা থেকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য এখানে বাড়ি নিয়েছি।’

নওগাঁ থেকে এসে রাজশাহীর ভদ্রা আবাসিক এলাকায় বসবাস করছেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন। কাজের সুবাদে এ জেলাতে এসেছেন তিনি।

নাসির বলেন, ‘আমার অবসরের টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনতে চাই। এখনও তেমন সুযোগ হয়ে উঠেনি। এখনও আমি ভাড়া বাড়িতে আছি, তবে এখানেই থেকে যাব। এখানে যানজট নেই। নাগরিক সুযোগ সুবিধা আছে, নিরাপদ। এ ছাড়াও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ থাকার কারণেই এ শহরটি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।’

রাজশাহীর সাহেব বাজারে বসবাস করেন সিরাজগঞ্জের সুধির বাবু। তিনিও এখানে একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন।

সুধির বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে প্রায় রাজশাহী আসতে হত। সেই থেকেই এই শহরের প্রেমে পড়া। এরপর আর এই শহরের মায়া ত্যাগ করতে পারিনি। এখন একটি ছোট জমি নিয়ে এখানেই বসবাস করতে চাই।’

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাসিন্দা ফাহিমা খাতুন বলেন, ‘মেয়েকে রাজশাহীতে কলেজে ভর্তি করেছি। আগামী দিনে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেখানেই ভর্তি করাতে চাই। তার পড়াশোনার জন্য আমরাও রাজশাহী শহরে যেতে চাই। চিন্তা করছি শহরেই জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করব। এই শহরে বসবাস করে শান্তি। এ কারণেই আর গ্রামে ফিরতে চাই না।’

আবাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীর স্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিজের আবাসস্থল নির্মাণে জনগণের ক্রমেই আগ্রহ বাড়ছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি এ নগরীতে ফ্ল্যাট ক্রয় করতে চাচ্ছেন। ফলে আবাসন শিল্পে একটা অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

এ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণের ফলে শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার পরিকল্পিত নগরায়নে আবাসন সমস্যার সমাধান ঘটছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনের (রেডা) সাধারণ সম্পাদক ও আল-আকসা প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান কাজী বলেন, ‘রাজশাহীতে মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের বসবাস। তারা তাদের সীমিত আয়ের মধ্য থেকেই একটি ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখেন। আমরাও তাদের টার্গেট করেই আবাসন ব্যবসা পরিচালনা করে থাকি।

‘মধ্যবিত্তরা যেন কিনতে পারেন, সে অনুযায়ী ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম নির্ধারণ করা হয়। রাজশাহীতে ডাক্তার, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারাই সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট কিনছেন। বিশেষ করে রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্রেতা বেশি। তারা এই শহরে বসবাসে বেশি আগ্রহী।’

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, সবুজ, পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য ও আলোকিত নগরী হিসেবে রাজশাহীর সুনাম সারা দেশে আছে। বাসযোগ্য ও শান্তির শহরে বসবাস ও উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পেতে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ রাজশাহীতে বাড়ি নির্মাণ, কেউ কেউ ফ্ল্যাট ক্রয় করছে।

তিনি বলেন, ‘তবে দ্রুত নগরায়নের ফলে যাতে রাজশাহী শহরের অবস্থা ঢাকার মতো না হয়, নগরীর যানজট পরিস্থিতি বৃদ্ধি না পায়, সেই বিষয়টি আমরা খেয়াল রেখেছি। নগরীর আয়তন বর্তমানের চেয়ে প্রায় চারগুণ বৃদ্ধির কাজটি প্রক্রিয়াধীন।’

নগরীর বিভিন্ন রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিকল্পিত নগরায়ন ও উন্নয়নে কাজ অব্যাহত আছে বলে জানান মেয়র।

এ বিভাগের আরো খবর