বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্ত্রীকে দুই বছরে ১১ বার হত্যার হুমকি সন্ত্রাসীদের!

  •    
  • ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২৩:৩১

জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, ‘স্বামী হত্যার পরিকল্পনাকারী মুসার গডফাদাররা এখনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত। তাদের অনেকেই জামিনে বের হয়ে আমাকে সপরিবারে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে। একের পর এক হুমকি দিচ্ছে। এসব ঘটনায় ১১টি জিডি করেছি। নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকেও চিঠি লিখেছি।’

‘সন্ত্রাসীরা দুই বছর আগে আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। তারপর থেকে আমার পেছনে লেগেছে। এমনকি ওরা আমার সন্তানকেও ছাড়ছে না। আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

‘রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় করতে এলাকায় আমার নামে মিথ্যা পোস্টার টানিয়েছে। বার বার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেও নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারছি না।’

শুক্রবার এভাবেই সন্তানসহ নিজের জীবন সংশয়ের শঙ্কার কথা বলছিলেন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি। তার স্বামীকে ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর আমতলা এলাকায় গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

ডলি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বামী হত্যার পরিকল্পনাকারী মুসার গডফাদাররা এখনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত। তাদের অনেকেই জামিনে বের হয়ে আবারও আমাকে সপরিবারে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে। এ নিয়ে গত দু’বছরে ১১ বার হুমকি দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনায় ১১টি জিডি করেছি। প্রতিটি হুমকির বিষয়ে ডিবি ও থানা পুলিশকে অবহিত করেছি।’

সবশেষ জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাহানপুর থানার ওসি সুজিত কুমার সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তার নামে এলাকায় মিথ্যা পোস্টার টানানোর অভিযোগ পেয়ে তদন্ত চলছে। আর তাকে হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।’

মতিঝিল বিভাগ ও ডিবি পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্বামীর টিপুর হত্যাকারী ও তাদের সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরেই নিহতের স্ত্রীকে হুমকি দিয়ে আসছে। এখন ওই চক্রের সদস্যরা এলাকায় পোস্টার টানিয়ে মিথ্যা তথ্যের অপপ্রচার চালাচ্ছে। দুর্বৃত্তরা তাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে- এমন অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টির তদন্ত চলছে।

মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডলি আরও বলেন, ‘ওরা আমাকে সুস্থ থাকতে দিচ্ছে না। পোস্টারে যেসব মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, তা আমার সন্তানদের জন্যও অসম্মানজনক।

‘আমার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনাকারীরাই বার বার আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। মূলত স্বামীর হত্যাকারীদের আসামি করে মামলা করার পাশাপাশি বিচার চাওয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র আমাকে এই হুমকি দিচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের অনেকেই এখন জামিনে রয়েছে।’

শাহজাহানপুর থানায় সবশেষ ২০ জানুয়ারি জিডি করেন ফারহানা ইসলাম ডলি। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার স্বামী হত্যা মামলার অনুসারীরা বিভিন্নভাবে আমার নামে মিথ্যা বানোয়াট কিছু কথা লিফলেট আকারে ছাপিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিলি করছে। তারা পোস্টারে আমার নামে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে।’

নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন নিয়ে এভাবে আশঙ্কার কথা প্রকাশ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৪-এর আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, ‘বার বার হুমকি পেয়ে বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছি। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকেও আবেদনের একটি কপি দিয়েছি। জিডির বিষয়ে জানিয়েছি।

‘তদন্তে কে বা কারা জড়িত, এর সবই জানা গেছে। অথচ আসামির তালিকায় থাকা অনেকে এখনও প্রকাশ্যে স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে পাঠানো আবেদনের বিষয়ে ফারহানা ডলি বলেন, দুই সন্তান ও আমার জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছি। সে সঙ্গে স্বামী হত্যার বিচার চেয়েছি। এছাড়া সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) হাবিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তা চেয়েছি।’

পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ফারহানাকে বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হুমকি দেয়ার অভিযোগ পেয়ে আমরাও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।’

ডিবিপ্রধানের কাছেও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন বলে তিনি জানান। এরপরও হুমকি থেমে নেই।

ফারহানা বলেন, ‘আমি নিজে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। এরপরও পরিবারের সদস্যসহ হত্যার হুমকি পাওয়াটা খুবই বেদনাদায়ক।’

এর আগে গত বছরের ১ এপ্রিল শাহজাহানপুর থানায় করা জিডিতে ফারহানা উল্লেখ করেন, তমাল পরিচয়ে এক ব্যক্তি তাকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে তার বাসার ঠিকানা জানতে চেয়ে বলেছে, পুলিশের কাছে তার নাম বলাটা ভালো হয়নি। এর আগে গত বছরের ২৫ ও ৩০ মার্চ একই নম্বর থেকে ফোন করে বাসার ঠিকানা জানতে চেয়ে তাকে হুমকি দেয়া হয়।

ডলি বলেন, ‘গত বছরের ২০ আগস্ট সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে আশিক নামে এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে মামলা থেকে সোহেল শাহরিয়ার, মারুফ রেজা ওরফে সাগর, মারুফ আহমেদ ওরফে মনসুর ও আশরাফ তালুকদারের নাম বাদ দেয়ার জন্য চাপ দেয়। ওই ব্যক্তি সে সময় পরিবারের আরও অনেকের লাশ ফেলারও হুমকি দেয়। এ ঘটনায় বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতারাও জড়িত রয়েছে। তারা নেপথ্যে থেকে হুমকি দিচ্ছে।’

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিপু হত্যার পর এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক নেই। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বলেন, টিপু অনেক ভাল নেতা ছিলেন। তিনি এলাকার মানুষের খুব কাছের ছিলেন। এলাকায় এখনও সন্ত্রাসীদের তৎপরতা রয়েছে। অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সহযোগী এই এলাকায় অবস্থান করছে। তারা এর আগেও অনেক রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করেছে।

ফারহানার অভিযোগের সূত্র ধরে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মামলায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে তদন্তকারী সংস্থা ডিবি। হত্যার পরিকল্পনাকারী সুমন শিকদার ওরফে মুসা, ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ আকাশ ও নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সুমনের দেয়া জবানবন্দিতে টিপু হত্যার ঘটনায় ১৬ জনের নাম এসেছে। তারা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

হত্যাকাণ্ডের পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সুমন শিকদারকে গত বছরের ৯ জুন ওমান থেকে ফিরিয়ে আনে পুলিশ। এরপর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুরে যানজটে আটকা পড়া মাইক্রোবাসে থাকা টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতিও নিহত হন। এই হত্যার ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ফারহানা শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। বছরখানেক আগে মামলার চার্জশিট দেয়া হলেও বিচারাধীন মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর