বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সস্তা-চটুল বইয়ে সয়লাব বইমেলা

  •    
  • ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২১:২৫

শিষ্টজনেরা বলছেন, কত বেশিসংখ্যক নতুন বই মেলায় এলো, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানের দিক থেকে কত গুরুত্বপূর্ণ নতুন বই বের হলো, কত বেশি ক্ল্যাসিক পুনর্মুদিত হলো, ছাপা, বাঁধাই প্রভৃতির মান কতটা উন্নত সেগুলো।

বইমেলায় সমগ্র জাতির রুচি, মননশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। এ মেলায় একটি জাতির অতীত ও বর্তমানের পরিচয় শুধু নয়, পূর্বাভাস পাওয়া যায় ভবিষ্যৎটি কেমন হবে সেটির বিষয়েও। অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এ প্রতিদিন প্রায় শ খানেক বই বের হচ্ছে। তার মধ্যে কতটি বই মানুষের চিন্তার খোরাক জোগাচ্ছে বা কতটি বই মানসম্মত সেটি এখন অবশ্য বিবেচ্য বিষয়।

শিষ্টজনেরা বলছেন, কত বেশিসংখ্যক নতুন বই মেলায় এলো, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানের দিক থেকে কত গুরুত্বপূর্ণ নতুন বই বের হলো, কত বেশি ক্ল্যাসিক পুনর্মুদিত হলো, ছাপা, বাঁধাই প্রভৃতির মান কতটা উন্নত সেগুলো।

ফেসবুকে কারও ভালো ফলোয়ার থাকলেই তারা বই বের করে ফেলছেন আর তার অনুসারীরা সেসব বই কিনতে প্রতিদিন ভিড় জমায় মেলায়। আর এসব দেখেই তাদের বই প্রকাশে উৎসাহী হচ্ছেন অনেক প্রকাশক। এক প্রকাশক তো বলেই ফেললেন; বইয়ের মান নয় বইটি কত বিক্রি হচ্ছে সেটিই তার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

এই পরিস্থিতি উত্তরণে লেখকরা বলছেন, কোনটা সাহিত্য আর কোনটা সাহিত্য নয়, সেটা বোঝা উচিত। কোনটা সৃজনশীল বই, কোনটা মননশীল বই আর কোনটা সৃজনশীল-মননশীল কোনো বর্গেই পড়ে না, সেটাও বোঝা উচিত। যত দিন পর্যন্ত না আমাদের প্রকাশকরা সচেতন হবেন, তত দিন পর্যন্ত একুশে বইমেলা এসব চটুল বইয়ে সয়লাবই থাকবে।

আলোচিত তিশা-মুশতাক দম্পতির বই প্রকাশ করেছে মিজান প্রকাশনী। এই প্রকাশনীর প্রকাশক আ.ন.ম মিজানুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ‘যারা একটু সেলিব্রিটি তাদের অনেককে আমি বলে রাখছি, ভাই তাড়াতাড়ি বই লেখেন। আপনার বই আমি প্রকাশ করবো। আর লিখতে না পারলে আমাকে বলেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর ২৫ জন নতুন লেখকের বই প্রকাশ করি।’

প্রকাশ করার জন্য মানসম্মত বই না পেলে কী করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব বই মানসম্মত হবে এরকম তো কোনো কথা নেই। ২৫টার মধ্যে ১০টা ভালো হলে আর পাঁচটা ভালো বিক্রি হলে তো হয়েছেই। বিক্রির জন্য পাঁচটি বই-ই যথেষ্ট। প্রয়োজনে আর ২০টি বইয়ে লস দেব। আমরা মূলত বিক্রিকেই প্রাধান্য দেই।’

তিশা-মুশতাকের বই ছাপানোর কারণ সম্পর্কে মিজানুর রহমান বলেন, ‘গতবছর তিশা-মুশতাকের বই আমি প্রকাশ করেছি। তখন ১ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। তাই এই বছর আমরা তার বই আবার প্রকাশ করেছি।’

আপনার প্রকাশনীর সম্পাদনা পরিষদ কয় সদস্যের- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পাঁচ সদস্যের। তারা হলেন, লেখক নুরুল হক আর এনায়েত রসুল।’বাকি তিনজন কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন যাকে পাওয়া যায় তখন তাকে নিয়ে নেই।’

পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা করার ক্ষেত্রে তারা কোন বিষয়টি প্রাধান্য দেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যে বই দেই সেই বই-ই তারা অ্যাপ্রুভ করে। তবে মানও যাচাই-বাছাই করে। তবে আমাদের বইয়ে ভুল কম।’

বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে নজর দেয়া উচিত জানতে চাইলে অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘বই প্রকাশের ক্ষেত্রে বইয়ের বিষয়বস্তুর দিকে নজর দেয়া উচিত। বইটি পাঠকপ্রিয়তা পাবে কি না বা বইটির বিষয়বস্তু পাঠকের উপযোগী কি না সেসব বিষয় দেখে আমরা বই প্রকাশ করি। যেসব বই পাঠককে বিনোদনও দেবে না আবার কেনো জ্ঞানও অর্জন করা যাবে না সেসব বই কী কাজে লাগবে আমি জানি না।’

তিনি বলেন, ‘ভাইরাল লেখকের বই কখনো টিকে থাকে না। তারা সাময়িকভাবে আসে আর কিছুদিন হইচই করে এরপর আবার চলে যায়। তাই এগুলো নিয়ে আমরা আশাহত না। যারা ভালো লেখক, যাদের বইয়ের কনটেন্ট ভালো তাদের বই টিকে থাকে।’

এই প্রকাশক বলেন, ‘সবার আসলে লেখক হওয়া উচিত না। ভালো লেখকের এখন পর্যাপ্ত অভাব। আমরা ভাষা আন্দোলন বা গবেষণধর্মী কোনো বইয়ের পাণ্ডুলিপি পাই না। গল্প উপন্যাসের দিকে না ঝুঁকে তরুণ প্রজন্মের বিষয়ভিত্তিক বইয়ের দিকে ঝোঁকা উচিত।’

আলোচিত-সমালোচিত ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর প্রথম বই বন্দিনি প্রকাশ করেছে আহমদ পাবলিশিং হাউজ। এই হাউজের পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডা. সাবরিনার বইয়ের লেখার মান ভালো। আমরা লেখা দেখেই বই প্রকাশ করেছি। বিক্রিও হয়েছে অনেক। সেলিব্রিটি ভাইরাল কি না এসব বিষয় আমাদের মূল লক্ষ্য না। আমাদের সম্পাদনা পরিষদ রয়েছে তারা যাচাই-বাছাই করেই বই প্রকাশের জন্য নির্বাচিত করেন।’

সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘পাণ্ডুলিপি প্রকাশের বিষয়ে ব্যতিক্রমী বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়। আর লেখার মানের ওপর প্রাধান্য থাকে সবচেয়ে বেশি। সেক্ষেত্রে সম্পাদকের ভূমিকা অনেক পরে। প্রকাশক যখন বইটি ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয় তখন সম্পাদকীয় বোর্ডের বিষয়টি আসবে। বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রকাশকের ইচ্ছাটাই মুখ্য। তবে সেক্ষেত্রে কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বইটি বের করা হচ্ছে সেটি হচ্ছে মূল বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘লেখালেখি করার স্বাধীনতা সবার আছে। তবে লেখাটা কি আসলে প্রকাশের উপযুক্ত হলো কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশকের ভূমিকাই সব। কোন বইটি প্রকাশ করা হলো সেটি পাঠক উপযোগী কি না সেটির দায়ভার যতটা না সেই লেখকের তার বেশি যে বইটি বের করলো সেই প্রকাশকের।’

অন্যপ্রকাশ প্রকাশনীর প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সম্পাদনা ছাড়া আমরা কোনো বই প্রকাশ করি না। প্রকাশক যখন মনে করে বইটি প্রকাশের উপযোগী হয় তখনই তা প্রিন্টে যায়।’

বই লেখকদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক দেশে বই লেখার অধিকার সবার আছে। সেটি পাঠক কিভাবে গ্রহণ করবে সেটি তাদের বিষয়। এখন অনেক বই-ই সম্পাদনা ছাড়া বের হচ্ছে। অনেক প্রকাশনীরই নিজস্ব সম্পাদকীয় বোর্ড নেই, প্রুফ রিডার নেই। প্রকাশকদের দৈন্যদশার কারণে এমনটা হচ্ছে। সাহিত্যের এই দিকটার খুবই করুণ দশা।’

এদিকে শুক্রবারের মেলা ছিলোলোকে লোকারণ্য। বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, গত শুক্রবারের চেয়ে এই শুক্রবারের ভিড় অনেক বেশি। বিক্রিও হচ্ছে গত শুক্রবারের চেয়ে ভালো। তবে ভিড় অনুযায়ী বিক্রি তেমন হচ্ছে না। আর এটি নিয়ে দুঃখিতও নন প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল থাকার কারণে ঢাকার এক প্রান্ত উত্তরা থেকে পাঠকরা সহজে মেলায় চলে আসতে পারছেন। এ জন্য ভিড়টাও একটু বেশি। তবে সে অনুযায়ী বিক্রি না হলেও এ জন্য আমি দুঃখিত না। মানুষ বইমেলামুখী হচ্ছে এটাই সস্তির খবর। এটাই দরকার ছিল।’

প্রতি শুক্রবারের মতো এই শুক্রবারের শিশুপ্রহরও জমিয়ে তুলেছে সিসিমপুর। বেশ কদিন আগে পহেলা ফাগুন শেষ হয়ে গেলেও মা-বাবাকে নিয়ে বাসন্তি সাজে মেলায় এসেছে অনেক ছোট্ট সোনামনিরা। তাদের হৈ-হুল্লোড় আর দৌড়াদৌড়িতে অনেক মা-বাবাও তাদের শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছেন।

মিরপুর থেকে চার বছরের বাচ্চা তানহাকে নিয়ে আসা বাবা রাসেল মজুমদার বলেন, ‘বাচ্চা বাসায় থাকার কারণে খেলার বা মাঠে দৌড়াদৌড়ির সুযোগ পায় না। তাই মেলায় নিয়ে এসেছি। এখানে তার দৌড়াদৌড়ি আর সিসিমপুরের চরিত্র হালুম টুকটুকি ইকুকে সরাসরি দেখে তার মধ্যে যে খুশির উচ্ছাস দেখতে পাচ্ছি সেটি আমাকেও আনন্দিত করছে।’

১৬তম দিনে নতুন বই ২৯৮টি

এদিন মেলায় এসেছে এ বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৯৮টি নতুন বই। এটি এখন পর্যন্ত নতুন বই আসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যা।

শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা

সকাল দশটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অমর একুশে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩০জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। ক-শাখায় প্রথম হয়েছে ফারহিনা মোস্তাক আযওয়া, দ্বিতীয় হয়েছে অংকিতা সাহা রুদ্র এবং তৃতীয় হয়েছে ফাবলিহা মোস্তাক আরওয়া। খ-শাখায় প্রথম হয়েছে সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ, দ্বিতীয় হয়েছেন সুবহা আলম এবং তৃতীয় হয়েছে অন্বেষা পণ্ডিত এবং গ-শাখায় প্রথম হয়েছে সিমরিন শাহীন রূপকথা, দ্বিতীয় হয়েছে আবদুল্লাহ আল হাসান মাহি এবং তৃতীয় হয়েছন তাজকিয়া তাহরীম শাশা। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আবৃত্তিশিল্পী ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ এবং ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন।

বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হারিসুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী, ফজিলাতুন নেছা মালিক এবং এস এম মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘দেশের মানুষের হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক আব্দুল মালিক আজীবন কাজ করে গেছেন। তিনি কেবল ভালো চিকিৎসকই ছিলেন না, একজন অসাধারণ শিক্ষক ও জনদরদী মানুষও ছিলেন। তার কীর্তির মধ্য দিয়েই তিনি গণমানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।’

‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন গবেষক ড. এম আবদুল আলীম, কথাসাহিত্যিক নাহার মনিকা, কবি স্নিগ্ধা বাউল এবং শিশুসাহিত্যিক অপু বড়ুয়া।

শনিবারের বইমেলা

শনিবার মেলা শুরু হবে সকাল এগারোটায় এবং চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। সকাল এগারোটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। সকাল দশটায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: শহীদ সাবের এবং স্মরণ: পান্না কায়সার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে মনির ইউসুফ এবং মামুন সিদ্দিকী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন গিয়াস উদ্দিন, সুভাষ সিংহ রায়, রতন সিদ্দিকী এবং শমী কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার।

এ বিভাগের আরো খবর