গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে এক দিনের ছেলে সন্তানকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক দম্পতির বিরুদ্ধে।
নবজাতকটিকে বিক্রির সঙ্গে পার্শ্ববর্তী উপজেলার এক ব্যক্তি ও নারী জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে বুধবার বিকেলে সন্তান বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন ভবানীপুর গ্রামের হেরেন ও ঝুম্পা দম্পতি। তাদের মধ্যে হেরেন বিশ্বাস পেশায় কর্মকার (কামার)। অপর অভিযুক্ত দুজন হলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা প্রান্ত ও একই উপজেলার পান্থাপাড়া এলাকার ভক্তিরানী ওরফে মানা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হেরেন বিশ্বাস নিয়মিত জুয়া খেলেন, যে কারণে তার বেশ কিছু ঋণ হয়। এ ঋণ পরিশোধ করতে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া ছেলেকে বিক্রি করে দেন তিনি। আর এ সন্তান বিক্রির সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত ও একই উপজেলার মানা সরাসরি জড়িত।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই যুগ আগে বিয়ে হয় হেরেন ও ঝুম্পা দম্পতির। গত মঙ্গলবার রাতে পঞ্চম ছেলেসন্তানের জন্ম দেন ঝুম্পা। এর পরের দিন ছেলেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয় ওই দম্পতি। সন্তান বিক্রির টাকায় ওই রাতেই বেশ কয়েকজনের ঋণ পরিশোধ করেন তারা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাবা হেরেন চন্দ্র মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে সন্তান বিক্রির অভিযোগটি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আগে জুয়া খেলতাম। এখন আর খেলি না।’
ওই সময় তার বেশ কিছু টাকা ঋণ থাকার কথা স্বীকার করেন হেরেন।
সন্তান বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সন্তান বিক্রি করিনি। আমি দত্তক দিয়েছি। অভাবের সংসার। শুধু ছেলেই হয়। মেয়ে হলে দিতাম না।’
ওই সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত আর মানার (ভক্তিরানী) সাহায্যে সন্তানকে নিয়ে গেছে। ভক্তির সাথে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ লোক মাইক্রোবাস নিয়ে এসে সন্তান নিয়ে গেছে।
‘যাদেরকে সন্তান দিয়েছি, তাদেরকে আমি চিনি না। কোনো দিন দেখিনি। ওরা (মানা ও প্রান্ত) জানে। শুনেছি তাদের (সন্তান নিয়ে যাওয়া লোকজন) বাড়ি রাজশাহীতে।’
ওই ফোন কল থেকেই একই কথা বলেন হেরেনের স্ত্রী ও শিশুর মা ঝুম্পা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাকে কাকে দিল, আমরা তাদেরকে চিনি না। এখন বাচ্চার জন্য অনেক মায়া হচ্ছে।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা আমাদের থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়েছেন।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গোবিন্দগঞ্জের প্রান্তের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
সন্তান বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সন্তান বিক্রির বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। তারা নিজের ইচ্ছায় দিয়েছে। আমাদের কাছে পেপারস আছে।’
কার কাছে শিশুটিকে দেয়া হয়েছে আর শিশুটি এখন কোথায়, এমন প্রশ্নের উত্তরে তাদের নাম-পরিচয় দিতে রাজি হননি প্রান্ত।
তার দাবি, যারা শিশুটিকে নিয়েছেন, তারা তার (প্রান্তের) দূরসম্পর্কের আত্মীয় হন।
ওই সময় আত্মীয়র নাম-পরিচয় ও ঠিকানা জানাতে রাজি হননি তিনি।
আরেক অভিযুক্ত মানার (ভক্তিরানী) সঙ্গে সম্পর্ক কী জানতে চাইলে চটে গিয়ে প্রান্ত বলেন, ‘আপনাকে কেন বলতে হবে? আপনার জেনে লাভ কী? এসব করে লাভ নাই।’
সন্তান নিয়ে যাওয়ার সব নথি দুই ঘণ্টার মধ্যে এ প্রতিবেদকের মোবাইলে হোয়াটআ্যাপে দেয়ার কথা জানিয়ে হঠাৎ ফোন কেটে দেন প্রান্ত। যদিও বেলা একটা পর্যন্ত কোনোও তথ্যই পাঠাননি তিনি।
প্রান্তর সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য দেন অভিযুক্ত মানা। তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘শিশুটিকে যাদেরকে দেয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে পরিচয় হয় আমাদের। সেখানেই আমি জেনেছি তারা নিঃসন্তান। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের একপর্যায়ে তাদের শিশুটি দত্তক দেয়া হয়েছে।’
শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া লোকজনের বাড়ি কোথায় এবং শিশুটি এখন কোথায় আছে জানতে চাইলে মানা উত্তর না দিয়ে গাড়িতে থাকার কথা বলেন। পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
এ বিষয়ে গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) উদয় কুমার সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এর আগে বিষয়টি আমরা অবগত ছিলাম না। যদি সন্তান বিক্রির ঘটনা ঘটে থাকে, তবে সেটি অপরাধ।
‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। যদি দত্তক দেয়াও হয়ে থাকে, সেটিও প্রসেস অনুযায়ী হয়েছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’