বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘নদীতে জমি বিলীন হলে কী খেয়ে বাঁচব?’

  •    
  • ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১২:১৭

পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, ‘নদী মাপজোকের জন্য  রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটা কমিটি করেছেন জেলা প্রশাসক। এখনও নদী মাপজোক হয়নি। তার আগেই কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। আমরা শিগগিরিই একটি প্রতিবেদন জমা দেব।’ 

নদীর ওপর নির্মিত সেতুর পাশে ভরাট করা হচ্ছে মাটি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেখানে দৃশ্যমান হবে বিলাসবহুল রিসোর্ট। সেতুর ওপর থেকে উদাস হয়ে তা দেখছিলেন স্থানীয় বর্ষীয়ান কৃষক আবুল কাশেম। বিত্তবানদের জন্য নির্মাণাধীন রিসোর্টে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে কাশেমের মতো অনেকের।

ক্যামেরাতে প্রতিবেদক চোখ রাখতেই এ কৃষক বলতে থাকেন, ‘নদীর গতিপথ সংকুচিত করে যে রিসোর্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে তা অপরিকল্পিত। এটি নির্মাণ হলে বর্ষা মৌসুমে সব পানি গ্রামের ওপর দিয়ে প্লাবিত হবে। এতে নদীতে তলিয়ে যাবে।

‘শুধু তাই নয়, আমাদের আবাদি জমি সব বিলীন হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা কী খেয়ে বাঁচব?’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহম্মদপুর ইউনিয়নের ফেরসাডাঙ্গী গ্রামের বুক চিরে বয়ে যাওয়া টাঙ্গন নদীর সেতুর পাশে নিচে মাটি ভরাট করে ‘শ্বেতপদ্ম’ নামের রিসোর্ট নির্মাণের কাজ চলছে। আর এ রিসোর্ট নির্মাণ কাজ যতই দ্রুতগতিতে আগাচ্ছে, ততই চিন্তা বাড়ছে এখানে বসতি করে থাকা ৩০০ পরিবার ও শত শত একর আবাদি জমিতে চাষাবাদ করা কৃষকের।

ভবিষ্যতের এমন শঙ্কা ও সমস্যা অনুধাবন করে এ গ্রামের কৃষকরা ১৯ পাতার গণস্বাক্ষর দিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তারা বিলীন হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

স্থানীয় কৃষক শামসুল হক বলেন, ‘নদী মাপজোক করে বাঁধ নির্মাণ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কিন্তু আমরা দেখছি এখানে নদীর গতিপথ সংকুচিত করে রিসোর্ট মালিকরা মাপজোকবিহীনভাবে বাঁধ দিচ্ছে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ বাধা সৃষ্টি হবে এবং আমাদের আবাদি জমি ও ঘরবাড়ি নদীতে চলে যাবে।

‘আমাদের দাবি পরিকল্পিতভাবে রিসোর্ট নির্মাণ হোক, যাতে করে আমাদের ঘরবাড়ি ও জায়গা-জমির কোনো ক্ষতি না হয়।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. শাহ আলম বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে রিসোর্ট নির্মাণ কাজ হচ্ছে তা নদীর ব্রিজ সংলগ্ন উজান পার্শ্বে উভয় দিকে মাটি ভরাট করে বাঁধ দিয়ে নদী সংকুচিত করা হচ্ছে। এতে নদীর স্বাভাবিক গতি পরিবর্তন হবে এবং ব্রিজের নিচের তিনটি স্প্যান বন্ধ হচ্ছে যা বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে। এখানে এভাবে রিসোর্ট হলে আমাদের গ্রামের মানুষকে না খেয়ে মরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।’

জানতে চাইলে শ্বেতপদ্ম রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন কামালের দাবি, নিজস্ব ক্রয়কৃত জমিতে তিনি রিসোর্ট নির্মাণ কাজ করছেন। নদীর এক অংশ জমিও দখল করেননি।

তার ভাষ্য, নদীর সীমানা নির্ধারণের পাশাপাশি রিসোর্ট অনুমোদনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। অনুমোদন পেলে তিনি রিসোর্ট নির্মাণকাজ সম্পন্ন করবেন।

অনুমোদন পাওয়ার আগে কাজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জমি সংরক্ষণের জন্য আমি কাজ করবই।’

নদীর প্রবাহে তিনি বাধা সৃষ্টি করছেন না বলেও দাবি করেন।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়ার বলেন, ‘নদী মাপজোকের জন্য রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটা কমিটি করেছেন জেলা প্রশাসক। এখনও নদী মাপজোক হয়নি। তার আগেই কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। আমরা শিগগিরিই একটি প্রতিবেদন জমা দেব।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তথা এসি (ল্যান্ড) মোহম্মদ আলাউদ্দীন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক (ডিসি) নদী মাপজোকের জন্য যে কমিটি করে দিয়েছেন, আমরা নদী মাপজোকের কাজ চলমান রেখেছি এবং (রিসোর্টের) কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। ’

ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আমরা কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। একটা কমিটি করেছি নদীর অবস্থান নির্ণয়ের জন্য। কমিটির কাজ চলছে।’

এ বিভাগের আরো খবর