বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেকেন্ড-ইন-কমান্ডসহ আরসার ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

  • প্রতিনিধি, কক্সবাজার   
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৮:০২

র‌্যাব-১৫-এর ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মো. আসাদ উল্লাহ নামে এক যুবককে ১০/১৫ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে র‌্যাব-১৫ কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১৫-এর একটি আভিযানিক দল রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, কয়েকজন আরসা সদস্য ওই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরে অবস্থান করছে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার ডেরায় হানা দিয়ে আরসার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আবুল হাশিম ও আরসা-প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষীসহ তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি অস্ত্র, একটি দেশীয় এলজি ও ৪ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে উখিয়ার ২০ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই অভিযান চালায় র‌্যাব-১৫-এর একটি দল।

বুধবার বেলা ১২টার দিকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মো. আসাদ উল্লাহ নামে এক যুবককে ১০/১৫ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে র‌্যাব-১৫ কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১৫-এর একটি আভিযানিক দল রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, কয়েকজন আরসা সদস্য ওই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরে অবস্থান করছে।

এ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দিগ্বিদিক দ্রুত পালানোর চেষ্টাকালে আরসার তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জি/৯ ব্লকের ৩১ বছর বয়সী আবুল হাসিম, ১২ নম্বর ক্যাম্পের এইচ/১ ব্লকের ৩২ বছর বয়সী হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার এবং ৬ নম্বর ক্যাম্পের ডি/৭ ব্লকের ৩৫ বছর বয়সী মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা।

আবুল হাসিম

ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত আবুল হাসিম ২০১৭ সালে মিয়ানমারের চিংড়িপ্রাং থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং ৪ নম্বর ক্যাম্পের জি/৯ ব্লকে সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন আরসায় যোগদান করেন তিনি। প্রথমদিকে নেট গ্রুপের সদস্য হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পরে ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্লক জিম্মাদারের দায়িত্বে ছিলেন। তার নেতৃত্বে ৪ নম্বর ক্যাম্পে (বর্ধিতসহ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার নতুন করে ঘাঁটি তৈরি করে আরসা।

এখানে উল্লেখ্য, র‌্যাব ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক একেক করে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও শীর্ষস্থানীয় নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ায় সন্ত্রাসী সংগঠনটির নেতৃত্বে সংকট দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে করিম উল্লাহ প্রকাশ কলিম উল্লাহ বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর আরসার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং গ্রেপ্তারকৃত আবুল হাসিম সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আরসার তিন সদস্যের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও সরঞ্জাম। ছবি: নিউজবাংলা

আরসার শীর্ষ নেতা ওস্তাদ খালিদের নির্দেশনায় ক্যাম্পে সশস্ত্র দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন হাসিম। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে সাজাপ্রাপ্ত আরসা সদস্যদের জামিনে মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। এসব কাজের জন্য মিয়ানমারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার।

তিনি ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এরশাদ, ইমাম হোসেন ও সাব মাঝি সৈয়দ আলম হত্যা, ৩ নম্বর ক্যাম্পের আব্দুল হামিদ, মো. কাসিম ও ইউনুস এবং ১৭ নম্বর ক্যাম্পের কাছিম হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে জানায় র‌্যাব। এসব অপরাধের দায়ে তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা চলছে বলেও জানা যায়।

হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার

২০১৭ সালে পরিবার পরিজন নিয়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে টেকনাফের উনচিপ্রাং সীমান্ত হয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার। বাংলাদেশে এসে কুতুপালং ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস শুরু করেন তিনি।

মিয়ানমারে অবস্থানকালে ২০১৭ সালেই তিনি আরসায় যোগদান করেন এবং আরসার নেতাদের এক স্থান হতে অন্য স্থানে মোটরসাইকেলযোগে আনা-নেয়া করতেন। বাংলাদেশে আসার পর ২০১৯ সালের শুরুতে আরসা নেতা মৌলভী আব্দুর রহমানের মাধ্যমে পুনরায় সক্রিয় হন তিনি। এই সময়ে ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার পাহারাদার এবং পরে ব্লক জিম্মাদার হিসেবে কাজ করতেন জোহার।

যারা মিয়ানমারে থাকাকালে আরসার সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিল এবং ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে, তাদের খুঁজে বের করে পুনরায় আরসায় ফেরত আনা ছিল তার মূল কাজ। ২০২০ সালের প্রথম থেকে তিনি মৌলভী লাল মোহাম্মদ এবং মুফতি আতিকের সহযোগী হিসেবে আরসার কাচারি বা আদালতে বিচার কাজ করতেন। তখন আরসার কাচারিতে বিভিন্ন নির্যাতন ও জরিমানা আদায়ের মূল দায়িত্ব ছিল তার ওপর।

২০২২ সালে কোনারপাড়া ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের পর আরসার কমান্ডাররা মিয়ানমার চলে গেলে তিনি আরসার পরিবহন শাখার কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পান। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের দায়ে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় ২টি মামলা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।

মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা

২০১৭ সালে পরিবার-পরিজন নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে টেকনাফের উনচিপ্রাং সীমান্ত হয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কুতুপালং ৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস শুরু করেন মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা।

জিজ্ঞাসাবাদের পর র‌্যাব জানায়, ২০১৬ সালে যোগদানের পর শুরুতে তিনি মিয়ানমারে আরসার পাহারাদার হিসেবে কাজ করতেন এবং পরবর্তীতে আরসা নেতাদের স্থানান্তরে সহযোগিতা করতেন। বাংলাদেশে প্রবেশের পর ২০১৮ সালের শুরুতে আরসা নেতা মৌলানা হাশিম শরীফ, মুফতি জিয়া এবং মৌলভী আবু আনাসের মাধ্যমে পুনরায় আরসায় সক্রিয় হয়ে সংগঠনটির সাথী ও ব্লক জিম্মাদার হিসেবে কাজ শুরু করেন।

পরবর্তীতে বাংলাদেশে অবস্থান করা আরসার প্রধান কমান্ডার ও অর্থ শাখার প্রধান মাস্টার কলিম উল্লাহর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক থাকায় তিনি আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করেন। ক্যাম্পে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা চলছে।

র‌্যাব-১৫-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, এ যাবত র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সামরিক কমান্ডার, গান গ্রুপ কমান্ডার, অর্থ সম্পাদক, আরসা প্রধান আতাউল্লাহর একান্ত সহকারী ও অর্থ সমন্বয়ক মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান, ক্যাম্প কমান্ডার, ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান, স্লিপার সেল ও ওলামা বডির অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার, অর্থ সমন্বয়ক, ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার, লজিস্টিক শাখার প্রধানসহ মোট ১০১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

তিনি জানান, তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ৭টি বিদেশি পিস্তল, ৫২টি দেশীয় অস্ত্র, ১৪০ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৫০.২১ কেজি বিস্ফোরক, ২৮ পিস ককটেল, ৪ পিস আইইডি, ১.৫ কেজি পারদ উদ্ধার করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর