রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ফুলের দোকানগুলোতে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে অতর্কিত হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তিন সংবাদকর্মী।
মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শাহবাগের ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপে এই ঘটনাট ঘটে। পাইকারি ফুলের দোকান মালিক সমিতির নেতা শেখ মো. মেরিন এই দোকানের মালিক।
মারধরের শিকার তিন সংবাদকর্মী হলেন নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঢাকা বিশ্বদ্যালয় প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম, রেডিও টুডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. ইমদাদুল আজাদ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাসেল সরকার।
এদের মধ্যে ইমদাদুল আজাদ তার ডান চোখের দুই পাশে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলার আবেদন করেছেন। এতে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন- পায়েল, আব্দুর রাজ্জাক, বুলু, দিদার, বাবু, জাহাঙ্গীর। তারা প্রত্যেকেই শাহবাগ ফুল মার্কেটের কর্মচারী।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকেলে নিউজবাংলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মনিরুল ইসলাম এবং বিডিনিউজ২৪ ডটকমের রাসেল সরকার পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে ফুলের বেচা-কেনার অবস্থা নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান। এ সময় মার্কেটে ফুলের দাম বাড়ার কারণ সংক্রান্ত তথ্য ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপে কর্মরত পায়েল নামের একজন কর্মকর্তার থেকে তারা জানতে চান। এ সময় তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে খারাপ আচরণ শুরু করে দেন।
একপর্যায়ে, এই দুই সংবাদকর্মীকে ভুয়া সাংবাদিক বলেও মন্তব্য করেন পায়েল। তখন এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে পায়েল উত্তেজিত হয়ে মনিরুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি মারতে শুরু করেন এবং ধাক্কা দিয়ে দোকান থেকে বের করে দেন। এসময় আশেপাশের কর্মচারীরাও তাদের সাথে যোগ দেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের গায়ে হাত তোলার খবর জানতে পেরে আমার সহকর্মী ইমদাদুল আজাদসহ আরও কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে অভিযুক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেন।
পরে মূল অভিযুক্ত পায়েল পালিয়ে যাচ্ছেন এ রকম সংবাদ পেয়ে তারা পায়েলের গতিবিধি অনুসরণ করে তার পিছু নেন। তবে সে পালাচ্ছে না বুঝতে পেরে তারা ফিরে আসতে চাইলে অভিযুক্তরা পেছণ থেকে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় ইমদাদের ডান চোখে রক্তক্ষরণ হওয়ায় তিনি গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন।
পরে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আরশাদ হোসেনসহ আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে অভিযুক্তকে হেফাজতে নেন।
ঘটনা প্রসঙ্গে মারধরের শিকার হওয়া ইমদাদুল আজাদ বলেন, আমি যখন শুনলাম আমাদের ভাইকে মারধর করা হয়েছে, আমি তৎক্ষণাৎ সেখানে ছুটে যাই। কিছুক্ষণ পরে সেখানে সারাবাংলা ডটনেটের প্রতিনিধি রাহাতুল ইসলাম রাফি ভাইও উপস্তিত হন। তখন কিছুক্ষণ আমরা ঘটনা প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছিলাম এবং কী হয়েছে এটা মনির ভাইয়ের কাছ থেকে শুনছিলাম। এমন মুহূর্তে দেখলাম যে, মনির ভাইকে যে ছেলেটা মারধর করেছে, সেই ছেলেটা অন্যদিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ওই সময় আমি, রাফি ভাই এবং রাসেল ভাই তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে এগিয়ে যাই। এরপর সে পালাচ্ছে না এ রকম বুঝতে পেরে আামরা ফিরে আসতে চাইলে অভিযুক্তরা পেছন থেকে আমাদের ওপর হামলা করে। আমাকে তারা এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি এবং লাথি মারা শুরু করে। তাদের একটি ঘুষি আমার চশমায় লেগে তা ভেঙে যায়। একপর্যায়ে, আমার চোখের দুই পাশে কেটে গেলে আমার সহকর্মীরা আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেন।
ঘটনার বর্ণনায় রাহাতুল ইসলাম রাফি বলেন, মনিরুল ইসলামকে মারধর করার পর মূল অভিযুক্ত পায়েল পার্শ্ববর্তী খাবারের দোকানের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমি, রাসেল সরকার, ইমদাদুল আজাদ তার গতিবিধি দেখে ফেরত আসার সময় ওই দোকানের ভেতরে ওই পায়েলের নেতৃত্বেই ৭-৮ জন মিলে আমাদেরকে মারধর করে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপের মালিক মো. মেরিন শেখ বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ঢাকা বাইরে আছি। শুনেছি দোকানে ঝামেলা হয়েছে। আমাদের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, তিন সাংবাদিককে শাহবাগ মোড়ের ফুল মার্কেটে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছি।