গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিরাট রাজার ঐতিহাসিক ঢিবি খননে একের পর এক মিলছে প্রাচীন অবকাঠামো ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
নিদর্শনগুলো প্রাচীন ও মধ্যযুগের হতে পারে বলে ধারণা দিচ্ছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খনন সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রথমবারের মতো ঢিবিতে খনন কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। যার খনন দায়িত্বে রয়েছেন অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর দুটি অঞ্চলের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল।
আর আট সদস্যের ওই খনন দলে প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা।
তিনি জানান, ঢিবিটি খননের শুরু থেকেই ২০ জন শ্রমিক খনন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
খনন সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে এই আনুষ্ঠানিক খননকাজের পূর্বে ১৯৭৮ সালে এখানে সংস্কৃত অক্ষরে খোদাই করে ‘নমঃ নমঃ বিরাট’ লেখা ৯ ইঞ্চি দীর্ঘ মহামূল্যবান একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। যা পরবর্তী সময় মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়।’
এ ছাড়া একই সময়ে কৃষ্ণ রঙের শিলা পাথর দ্বারা তৈরি একটি হস্তীমস্তক ও সিংহদ্বারের একটি পাথরের খাম্বাও পাওয়া যায়। তার মধ্যে হস্তীমস্তকটি রাজশাহী জাদুঘরে এবং সিংহদ্বারের পাথরের খাম্বাটি মহাস্থান জাদুঘরে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় পাঁচ টন ওজনের একজোড়া পাথরের কপাট (দরজা) কয়েক যুগ ধরে পড়ে থাকার পর, এক সময় তা স্থানীয়রা খণ্ড খণ্ড করে নিয়ে গেছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিরাট রাজার ঢিবিতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত ৫০ মিটার প্রস্থ, ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং চার মিটার উচ্চতার ঢিবিটিতে খননকাজ করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খনন সংশ্লিষ্টরা। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে প্রাচীন যুগের বিভিন্ন অবকাঠামো ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
খনন দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিরাট রাজার ঢিবি খননে আমাদের ধারণার থেকেও অনেক ব্যতিক্রম কিছু লক্ষ্য করা গেছে এবং বড় আকারের অবকাঠামো পাওয়া গেছে। যা প্রাচীনকালের নিদর্শনের সাক্ষ্য দেয়। খননের এ পর্যায় পর্যন্ত এখানে পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, ধর্মীয় উপাসনালয়ের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয় এমন অলংকৃত ইট, ভিত্তিপ্রস্তর পিলার পাওয়া গেছে।
‘তবে এগুলো ঠিক কোন সময়ের এবং কারা এখানে বাস করতেন বা কাদের রাজ্য এলাকা ছিল এটি তা বড় আকারে খনন সম্পন্ন হলে বলা যেতে পারে।’
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এ প্রত্নতত্ত্ব স্থলটি বড় পরিসরে খনন কাজ শেষে স্থানটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং একইসঙ্গে এর সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।’
জনশ্রুতি আছে, এখানে প্রাচীন একটি দুর্গ নগরী ছিল। এর নিরাপত্তার জন্য ছিল সুউচ্চ প্রাচীর এবং প্রাচীরের বাইরে প্রশস্ত ও সুগভীর পরিখা (দুর্গের চারপাশে খনন করা খাল)।
এ ছাড়া বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯০৫ সালের দিকে এ স্থানটি জঙ্গলে ঘেরা ছিল। এর দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি কয়েক বছর আগে স্থানীয় সাঁওতালরা জায়গাটি পরিষ্কার করে সেখানে তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করেন।