বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল মুক্তাগাছার মণ্ডা

  • প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ    
  • ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০৯:৫২

মণ্ডার উদ্ভাবক গোপাল পালের বংশধর রবীন্দ্র নাথ পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার দুপুরে খবরটি জানার পর থেকে অনেক খুশি হয়েছি। ১৮২৪ সাল থেকে মণ্ডার সুনাম ধরে রাখা হয়েছে। আগেও মণ্ডার স্বাদসহ গুণগত মান ভালো রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, এখনও তা অব্যাহত থাকবে।’

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ঐতিহ্যবাহী ‘মণ্ডা’ অবশেষে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।

সোমবার রাতে এই মণ্ডার উদ্ভাবক গোপাল পালের বংশধর রবীন্দ্র নাথ পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার দুপুরে খবরটি জানার পর থেকে অনেক খুশি হয়েছি। ১৮২৪ সাল থেকে মণ্ডার সুনাম ধরে রাখা হয়েছে। আগেও মণ্ডার স্বাদসহ গুণগত মান ভালো রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, এখনও তা অব্যাহত থাকবে।’

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘নতুন করে মুক্তাগাছার মণ্ডা, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর ও আতর পণ্যকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বাংলাদেশে অনুমোদিত জিআই পণ্যের সংখ্যা ২৮টিতে দাঁড়িয়েছে।’

জনশ্রুতি আছে, গোপাল পাল স্বপ্নে প্রায়ই এক সাধুর দেখা পেতেন। স্বপ্নে সাধু তাকে মণ্ডা তৈরির নিয়ম শেখাতেন। প্রায় রাতেই সাধু মণ্ডা তৈরির নিয়ম বলতেন। সর্বশেষ এক রাতে মণ্ডা তৈরির শেষ নিয়মটি শেখালেন এবং বললেন, ‘তুই এই মণ্ডার জন্য অনেক খ্যাতি অর্জন করবি। তোর মণ্ডার সুখ্যাতি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে।’

গোপাল পাল স্বপ্নে মণ্ডা তৈরির পদ্ধতি পেয়ে মণ্ডা বানিয়ে প্রথমেই খাওয়ান মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীকে। মণ্ডা খেয়ে তৃপ্তি পেয়ে নিয়মিত মণ্ডা দিতে বলেন। মহারাজা সূর্যকান্তের ছেলে শশীকান্তও মণ্ডা খুব পছন্দ করতেন। সেই থেকে আজ অবধি বংশপরম্পরায় মণ্ডা তৈরি হচ্ছে।

দোকানে থাকা একটি পুস্তিকা থেকে জানা যায়, মণ্ডার কারিগর গোপাল পাল ১৭৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস মুর্শিদাবাদে। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের পর মুর্শিদাবাদের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়। তখন গোপাল পালের বাবা রাম পাল প্রাণ ভয়ে পালিয়ে মালদহ হয়ে বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহীতে চলে আসেন। এরপর সেখান থেকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার তারাটি গ্রামে নতুন করে বসবাস শুরু করেন।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে গোপাল পালের বংশধররা শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেন। সেখানেও তারা মণ্ডা তৈরি করেন। কিন্তু ভারতের আবহাওয়া বাংলাদেশের মণ্ডার বিশেষ উপযোগী ছিল না। তাই আগের স্বাদ আর হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তাগাছায় ফিরে এসে সেই একই স্থানে মণ্ডা তৈরি আরম্ভ করেন তারা। ১০৮ বছর পর ১৯০৭ সালে মারা যান সুস্বাদু এই মণ্ডার উদ্ভাবক গোপাল পাল।

পাকিস্তান আমলে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দোকানে বসে মণ্ডা খেয়ে সুনাম করেছেন।

জিআই পণ্য হিসেবে অনুমোদন দেয়ার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে যাত্রা শুরু হয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের। বর্তমানে এর নাম পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)।

এরপর ২০১৩ সালে পাস হয় ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩। এর দুই বছর পর ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বিধিমালা, ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর