অমর একুশে বইমেলায় রোববার ১১তম দিন পর্যন্ত নতুন বই এসেছে ৯১৬টি। এরমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই এসেছে ২০টি। তবে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নতুন বইয়ের পাশাপাশি পুরাতন বইয়েরও ভালো পাঠক চাহিদা আছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রয়প্রতিনিধিরা।
তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এই বইগুলোতে কিশোর থেকে প্রবীণ সবার আগ্রহ আছে। তারা এসে অন্য বইয়ের পাশাপাশি এসব বইও খুঁজছেন।
বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী শামিম আহমেদ বলেন, সিরু বাঙালির লিখা ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: বহির্বিশ্বে শত্রু-মিত্র’, আসাদ চৌধুরীর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বইটি বেশি বিক্রি হচ্ছে।
অক্ষর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আসিফুল হক বলেন, আমাদের প্রকাশনী থেকে মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প নিয়ে যেসব বই আছে সেসব বই একটু বেশি বিক্রি হচ্ছে। যেমন মাহবুব রেজার লিখা মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প, রফিকুর রশীদের লিখা ‘একুশের ও মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প’ এই বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।
কথা প্রকাশ প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি রিয়াজ ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের চাহিদা ভালো আছে। কিশোর থেকে বৃদ্ধ বা প্রবীণ সবাই বইগুলো কিনছে। তার মধ্যে, হাসিনা আহমেদের ‘১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের পত্রপত্রিকা’, সেলিনা হোসেনের ‘পূর্ববঙ্গ থেকে বাংলাদেশ’, সালেক খোকনের ‘৭১ এর আকরগ্রন্থ’, ‘১৯৭১ খেতাবপ্রাপ্ত ত্রিশ বীর’, মিল্টন কুমার দেবের ‘১৯৭১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবি’ এই বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।
আগামী প্রকাশনীর বিক্রয়প্রতিনিধি তানজীম হাসান তারেক বলেন, মেজর রফিকুল ইসলামের ‘বুদ্ধিজীবি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে’, এম আর আখতার মুকুলের ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা’ ড. মোহাম্মদ জহুরুল ইসলামের ‘মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর বগুড়া’ বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয়প্রতিনিধি কায়সার হোসেন মামুন বলেন, আসাদ চৌধুরীর ‘একাত্তরের ৭১ কবিতা’, আর হাসান মোরশেদের মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক উপাখ্যান ‘দাসপার্টির খোঁজে’ বইটি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মহিউদ্দিন আহমেদের ‘তেহাত্তরের নির্বাচন’, ‘চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ’ বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের জন্য ভালো অবস্থানে আছে প্রথমা প্রকাশনী। এই প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি সোহাগ বলেন, আমাদের বৈশিষ্ট্যই হলো মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনীতি। তাই এই ক্যাটাগরির বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের বইগুলো আমাদের প্রকাশনী থেকে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। তারমধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদের ‘১৯৭১ ভারতের বাংলাদেশ যু্দ্ধ’ শ্রীনাথ রাঘভনের ‘১৯৭১ বাংলাদেশে সৃষ্টির বৈশ্বিক ইতিহাস’, মুক্তিযুদ্ধের এক অজানা কাহিনি নিয়ে লিখা ‘১৯৭১ শিলিগুড়ি সম্মেলন’, মুক্তিযুদ্ধের দৈনিক ঘটনালিপি নিয়ে ‘একাত্তরের দিনপঞ্জি’ বইগুলো পাঠক চাহিদা তুঙ্গে।
প্রথমা প্রকাশনী থেকে মুক্তিযুদ্ধের দৈনিক ঘটনালিপি নিয়ে ‘একাত্তরের দিনপঞ্জি’ বইটি কিনেছে স্বাধীন আহমেদ নামের এক পাঠক। তিনি এসেছেন মিরপুর থেকে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চেতনা, আমাদের আবেগ। আমাদের এসব বিষয়ে জানতে হবে। এই বিষয়ে আমাদের তথ্যে সমৃদ্ধ হতে হবে, না হয় কুচক্রি গোষ্ঠীর ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা সফল হয়ে যাবে। এজন্য অন্য ক্যাটাগরির বইয়ের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের বই কিনছি।
মাওলা ব্রাদার্সের বিক্রয়কর্মী রোহান হোসাইন বলেন, আমাদের প্রকাশনীতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এবার তেমন নতুন কোন বই নেই। তবে পুরাতন বইগুলোর মধ্যে সেলিনা হোসেনের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’, ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য’, মুনতাসীর মামুনের ‘বঙ্গবন্ধু কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা এনেছিলেন’, সাইদ হোসেন দারার ‘আখ্যান ১৯৭১’, সুরমা জাহিদের ‘বহির্বিশ্বে গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ বইগুলোর ভালো চাহিদা।
এ ছাড়া অনন্যা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত মো. আজিজুল আলমের ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের ১০ নম্বর সেক্টর, সাগর সীমানায় অজেয় সেনা, বাংলাদেশ নৌ-কমান্ডো বাহিনী’ বইটির পাঠক চাহিদা আছে।
এদিন জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনের দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। বই দুইটি হলো, প্রকাশনী ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন’ ও ‘গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’। অনন্যা প্রকাশনী এই বই দুইটি প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আমাদের গবেষণায় আছে ২ লক্ষ নারী ৭১ এর গণহত্যার সময় নির্যাতিত হয়েছে। কিন্তু মুনতাসীর মামুম গবেষণা করে দেখিয়েছেন সেই সংখ্যা ৫ লক্ষ। এক বিশাল পরিসর নিয়ে তিনি এই গ্রন্থ রচনা করেন। আমি বিশ্বাস করি এই পুস্তক থেকে জানা মানুষরাও অনেক নতুন তথ্য পাবে। আমি আশা করবো আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সকল লাইব্রেরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই বইটি স্থান পাবে।
সোমবারের সময়সূচি
সোমবার অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল তিনটায় এবং চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠান
বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: হেনা দাস শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জোবাইদা নাসরীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ঝর্না রহমান এবং ফওজিয়া মোসলেম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শিরীণ আখতার।